Illegal Construction : সল্টলেকের বেআইনি আবাসনে জল-বিদ্যুৎ বন্ধে নির্দেশ কোর্টের
এই সময় | ০৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: বিধাননগরের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি আবাসনে অবিলম্বে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধে পুরসভা এবং বিদ্যুৎ পর্ষদকে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। অভিযুক্ত প্রোমোটারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পাশাপাশি বিধাননগর এলাকায় ভবিষ্যতে তাঁরা কোনও নির্মাণকাজ করতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।সেই সঙ্গে ১২ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এক কোটি টাকা সিকিউরিটি মানিও জমা করতে হবে দুই প্রোমোটারকে। ৩০ দিনের মধ্যে আবাসন খালি করতে হবে বাসিন্দাদের। তার পরেই পুরসভাকে ওই পাঁচতলা বেআইনি বহুতল ভাঙতে পদক্ষেপ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
জমির মালিক ওই প্রোমোটারদের থেকে চুক্তির কত টাকা পেয়েছেন এবং প্রোমোটাররা ফ্ল্যাট বিক্রি করে কত পেয়েছেন--তাও জানাতে হবে আগামী শুনানিতে। জাভেদ হুসেন ও ইমতিয়াজ হুসেন নামে দুই প্রোমোটারের সম্পত্তির খতিয়ানও হলফনামা দিয়ে জমা দিতে হবে। আপাতত তাঁরা তাঁদের কোনও সম্পত্তি আদালতের অনুমতি ছাড়া কেনা-বেচা বা হস্তান্তর করতেও পারবেন না।
১৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানিতে আদালতের নির্দেশগুলি কার্যকরী হলো কিনা, জানাতে হবে। প্রায় পাঁচ বছর আগে বিধাননগরের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগরে পাঁচিবালা পোল্লের জমিতে আবাসন তৈরির জন্যে চুক্তি হয় ওই দুই প্রোমোটারের সঙ্গে। অভিযোগ, পুরসভার কোনও অনুমতি ছাড়াই পাঁচতলা বহুতল গড়া হয়। গত দুর্গাপুজোর আগে এ নিয়ে মামলা ওঠে হাইকোর্টে।
বিচারপতি তখনই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিলেও আবাসিকদের আবেদনে কিছুটা সময় দেন। সেই মামলা ফের বুধবার শুনানির জন্য ওঠে। ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানতে চান, ‘প্রোমোটাররা কোথায়? এখনই পুলিশ হেফাজতে পাঠাব। কত বড় আবাসন বানিয়েছেন?’ প্রোমোটারদের আইনজীবী জানান, পাঁচতলা। বিচারপতি জানতে চান, পুরসভার অনুমতি নিয়েছিলেন?
আইনজীবী বলেন, বানানোর আগে নেওয়া হয়নি, পরে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আদালতের প্রশ্ন, কত টাকা পেয়েছেন এই ফ্ল্যাট বিক্রি করে? আইনজীবী জানান, ৫০ শতাংশ টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেটাও নির্মাণকাজে ব্যবহার হয়েছে। বিচারপতি বলেন, আসল প্রশ্ন হলো নির্মাণ বৈধ না অবৈধ?
নির্মাণ যদি অবৈধ হয় তবে ধুলোয় মিশিয়ে দিতেই হবে। আইনজীবী তখন বলেন, পুরসভা এবং পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও তা হলে পদক্ষেপ করা উচিত। মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, পুরসভার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এবং ওই প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-দমন আইনে মামলা হওয়া উচিত।
কারণ, সব কিছু জেনেও চুপচাপ থেকে বেআইনি নির্মাণে পুরকর্তাদের মদতের পিছনে অন্য অঙ্ক কাজ করেছে। বিধাননগর পুরসভার আইনজীবী বলেন, ‘বিধাননগরের ৩৫ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩০টি সন্দেহজনক নির্মাণের খবর আমরা পেয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে সব নির্মাতার কাছে নথি চাওয়া হয়েছিল। বেশিরভাগ নির্মাতার কাছেই বৈধ নথি নেই। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্মাণ ভাঙার নির্দেশও পুরসভা দিয়েছে।'
বাসিন্দাদের তরফে আইনজীবী বলেন, ‘যাঁরা ওখানে আছেন তাঁরা খুব গরিব। তাঁরা কোথায় যাবেন?’ বিচারপতির মন্তব্য, ‘তাঁদের উচিত ছিল বৈধ অনুমোদন আছে--এই ধরনের আবাসনে বিনিয়োগ করা। আগে নিজের জীবন বাঁচান, যদি ওই বাড়ি ভেঙে পড়ে, তা হলে কী হবে? গরিব মানুষ কি মরার জন্যে জন্মেছেন?’
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘১০ লাখ টাকা বাজারমূল্যের বেআইনি ফ্ল্যাট দু’লাখে কিনে আদালতের কাছে এসে কান্নাকাটি করলে হবে? আদালত কী করবে!’ আদালত স্পষ্টই জানায়, গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনায় এতগুলি মানুষের মৃত্যুর পরে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে কড়া হতেই হবে।