এক ঘণ্টার জটিল অপারেশনের পর শেষমেশ কার্যত যমের দুয়ার থেকে ফিরে এল পরিবারের প্রিয় পোষ্য। বয়স কম থাকলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে তুলনায় সহজে যে সমস্যার সমাধান করা যেত, এই পোষ্যর ক্ষেত্রে পশুচিকিৎসকদের সেটাই করতে হলো তার পেট কেটে। তবে সব শেষে পুরোদস্তুর সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরল গোল্ডেন রিট্রিভার পোগো।বছর খানেক আগেই অসঙ্গতিটা নজরে এসেছিল বিশিষ্ট তবলা-বাদক তন্ময় বসুর। তাঁর প্রিয় পোষ্য পোগো যেন একটুতেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ছে। তার পেটটাও ক্রমশ যেন বড় হয়ে যাচ্ছিল। গোল্ডেন রিট্রিভার প্রজাতির কুকুররা সাধারণত ‘ফ্যামিলি ডগ’ হিসেবে দুনিয়া জুড়েই অত্যন্ত জনপ্রিয়। অথচ তার কি না এমন আচরণ!
শরীর সুস্থ আছে তো?
এই সন্দেহ আরও বাড়ল, যখন তন্ময়বাবু দেখলেন, না-ঘুমিয়ে প্রায় সারা রাত জেগে বসে রয়েছে পোগো। আর দেরি না-করে পশুচিকিৎসককে দেখানো হলো। পোগোর বয়স ১০ বছর। পোষ্যর বয়স বাড়ছে, সুতরাং পায়ের জোর কমছে বলে ধরে নিয়ে প্রথমে ফিজ়িওথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তন্ময়বাবু বলছেন, ‘শেষ পর্যন্ত পোগোর হ্যান্ডলার ওর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর প্রস্তাব দেন। সেটা করতে গিয়েই কিছু দিন আগে সল্টলেকের পশু চিকিৎসাকেন্দ্র মৈত্রী ভাবনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ।’ পোগোর ইউএসজি করিয়ে ধরা পড়ে, তার পেটে রয়েছে বড়সড় একটি টিউমার। মৈত্রী ভাবনার পশু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ নয়, ওই টিউমারের সূত্রপাত পোগোর জন্ম হওয়া ইস্তকই।
মৈত্রী ভাবনার তরফে শঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও শ্রীজিতা ঘোষ জানাচ্ছেন, মানুষের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মানোর সময়ে শুক্রাশয় চলে আসে শুক্রথলি বা স্ক্রোটাল স্যাকে। কিন্তু কুকুরের ক্ষেত্রে তেমন হয় না। কুকুরছানা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ে তাদের শুক্রাশয় পেটের মধ্যে থাকে— জন্মের দু’-তিন মাস পর শুক্রথলিতে নেমে আসে শুক্রাশয়। আর কোনও কারণে শুক্রাশয়গুলো স্বাভাবিক ভাবে শুক্রথলিতে না-নেমে এলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে সেটা শুক্রথলিতে নামাতে হয়।
শঙ্কর ও শ্রীজিতা বলছেন, ‘কুকুরের বয়স ৬ মাস থেকে ৪ বছরের মধ্যে যদি ওদের শুক্রাশয় পেট থেকে না-নামানো হয়, তা হলে সেটি ক্রমশ রূপান্তরিত হয় টিউমারে। এই অবস্থায় বেশি দিন ফেলে রাখলে ওই টিউমার ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি হয়। পোগোর ক্ষেত্রে ইউএসজি করে আমরা দেখি, ওর একটি শুক্রাশয় পেটে আটকে ছিল।’
এই ধরনের অপারেশনের মাধ্যম সাধারণত ল্যাপারোস্কোপি হলেও পোগোর ক্ষেত্রে তেমন করা যায়নি। ওর টিউমার অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছিল। পোগোর বয়সও বেশি। সম্প্রতি ঘণ্টা খানেকের একটি অপারেশনে পোগোকে পুরোপুরি সুস্থ করা গিয়েছে বলে জানাচ্ছে ওই পশু চিকিৎসাকেন্দ্র।
প্রিয় পোষ্যকে পুরোপুরি সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে অত্যন্ত খুশি তন্ময় বসু। তিনি বলছেন, ‘ওর পায়ের ব্যথা আর নেই। যে শারীরিক কষ্ট ওকে সারা রাত ঘুমোতে দিত না, সেই কষ্টও উধাও। পোগো এখন একেবারে আগের মতোই।’