• Indian New Penal Code : দণ্ড সংহিতা প্রচারে রাজ্যকে চিঠি কেন্দ্রের, ক্ষুব্ধ ডাক্তাররা
    এই সময় | ০৫ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: বদলেছে আইপিসি, সিআরপিসি। এসেছে নতুন আইন— ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম। যেগুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অনেকেরই নেই এখনও। ব্যতিক্রম নন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসায় গাফিলতি কিংবা তার জেরে মৃত্যুর ঘটনায় নতুন আইনে চিকিৎসকদের মেডিকো-লিগ্যাল ঝুঁকি কোথায়, কোন আইনের বিধান কেমন কড়া, তা নিয়ে চিকিৎসক সমাজকে সচেতন করতে এবার তাই রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।সব রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবকে লেখা ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস (ডিজিএইচএস) অতুল গোয়েলের দিন তিনেক আগের সেই চিঠি দেখে অসন্তোষ ছড়িয়েছে চিকিৎসক মহলে। তাঁদের বক্তব্য, যে রক্ষাকবচের কথা বলা হয়েছিল নতুন আইন পাশের আগে, এখন দেখা যাচ্ছে, তা মানা হয়নি সে ভাবে। চিকিৎসকদের ঝুঁকি রয়ে গিয়েছে সেই একই রকম। বরং আইনের অতিসরলীকরণের জেরে সেই ঝুঁকি কিছু ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ বেশিই। গাফিলতিতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আখেরে শাস্তির সংস্থান বেড়েই গিয়েছে নয়া আইনে।

    চিঠিতে জানানো হয়েছে, আগে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩০৪এ ধারায় গ্রেপ্তার করা হতো চিকিৎসকদের। নতুন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সেই সংস্থান রাখা হয়েছে ১০৬ ধারায়। কিন্তু এর ভালো ও মন্দ দিক দুটোই আছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ, পুরোনো আইনে যেখানে গাফিলতিকে ধর্তব্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সংস্থান ছিল পুরোপুরি, সেখানে নতুন আইনে এই ধারাটিকে জামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, পুরোনো আইনে যেখানে ৩ মাস, ৬ মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ডের সংস্থান ছিল, নতুন আইনে তা করা হয়েছে ২-৫ বছর পর্যন্ত। সঙ্গে বাধ্যতামূলক জরিমানা।

    অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘নতুন এই আইনে চিকিৎসকদের শাস্তি কার্যত আরও বাড়ানো হলো। এতে চিকিৎসকদের ক্ষোভ আরও বাড়বে।’ তিনি জানান, চিকিৎসায় গাফিলতি বা অবহেলার রকমফের আছে। পুরোনো আইনের নানা ধারায় তা বিবেচনা করা হতো। কিন্তু নতুন আইনে সব অবহেলাকেই এক নিক্তিতে মাপা হচ্ছে!

    তাঁর প্রশ্ন, ‘সব ক্ষেত্রে একই শাস্তি হয় কী করে? অবহেলা যে হয়েছে, সেটা প্রমাণ করবে কে? অবহেলা, ভুল ও ত্রুটি বিচারে বিশেষজ্ঞ মতামতের কথা সুনির্দিষ্ট ভাবে আইনে বলা নেই কেন?’ তাঁর দাবি, নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-এর বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না, আইনে এমন সংস্থান থাকা জরুরি।

    চিকিৎসকরা বলছেন, মডার্ন মেডিসিনের ব্যাপকতা, দুনিয়াজুড়ে তার নিরন্তর গবেষণা ও প্রযুক্তির বিপুল উন্নতিতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে। কোনও চিকিৎসা ভুল না ঠিক, সেটা বিজ্ঞান নির্ধারণ করে। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া তা বলে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও সীমাবদ্ধতা আছে। রোগীর মৃত্যু হলেই ভুল চিকিৎসা বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিপজ্জনক প্রবণতা চিকিৎসক সমাজের কাছে এখন আতঙ্কের বিষয়। ‘এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আগ্রাসী চিকিৎসা করার সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। তাই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৬ ধারার সংশোধন দরকার’— মন্তব্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি কৌশিক চাকীর।

    কৌশিক চান এমন একটি আইন, যেখানে সব দিকের ভারসাম্য থাকবে, চিকিৎসকদের একপেশে ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হবে না। সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বস মনে করেন, ‘শুধু আইন বদলালেই হবে না। পুলিশের মানসিকতাতেও বদল দরকার। যে ভাবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলেই পুলিশ বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করছে এবং জামিনঅযোগ্য ধারা দিয়ে পুলিশ হেফাজতে রেখে দিচ্ছে, সেটাও তো বন্ধ হওয়া দরকার। তার প্রতিবিধানও থাকা জরুরি আইনে। কিন্তু নতুন আইনে এমন কিছুর প্রতিফলন তো নেই।’
  • Link to this news (এই সময়)