সোশ্য়াল মিডিয়ায় প্রতিদিনই হাজার হাজার পোস্ট-বার্তা-ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেগুলির মধ্যে কিছু পোস্ট সত্য। অনেক পোস্টেরই আবার সত্য়তা নেই। বহুকাল আগের কোনও পোস্ট সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপলোড করে বিভ্রান্ত করা হয় নেটিজেনদের। নেটিজেনরাও চোখ বন্ধ করে অনেক সময় সেই সব পোস্টেক সত্যি ভেবে বসেন। শেয়ার হয় একাধিকবার। মুখে মুখে ঘোরে সেই সব বিভ্রান্তিকর পোস্টের কথা। আসল সত্য আস্তিনের আড়ালে চাপাই পড়ে থাকে অর্ধেক সময়। সম্প্রতি সেই এরকম এক ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে। সেই পোস্টে দাবি করা হয়, ভারতে রেলট্র্যাকে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে পাত বসানো হচ্ছে। এই পোস্টটির সত্যতা যাচাই করা হয় ফ্য়াক্ট চেকের মাধ্যমে।কী দাবি করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটিতে?
এক এক্স হ্যান্ডেলে এক ব্যবহারকারী ২৭ জানুয়ারি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন। ভিডিয়োতে দেখা যায় রেল ট্র্যাকের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে রেললাইনে পাত বসানোর মেশিন। ভিডিয়োটি ভারতের বলে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে।
ওই পোস্টে ব্য়বহারকারী লিখেছেন, 'এত উন্নত মানের প্রযুক্তি আজকের ভারতে ব্যবহৃত হয়। যে প্রযুক্তি ৬০ বছর ধরে ভারত সরকার ব্যবহার করতে পারেনি। কারণ তখন তো ভারতের জনগণের ট্যাক্সের টাকা সুইস ব্যাঙ্কে জমা হয়েছে। জয় শ্রীরাম' পোস্টটিতে বিপুল সংখ্য়ক লাইক পড়েছে। ভিউও পড়েছে বিপুল।
তদন্ত
পোস্টটি প্রকাশ্যে আসতেই আসল ঘটনাটি কী তা জনতে বিশ্লেষকরা খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন ভিডিয়োটি। দেখা যায় রেলওয়ে ট্র্যাক লেয়িং মেশিনের ওপর লেখা 'চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন'। এই ভিডিয়োটি আসলে কোথাকার তা জানতে তৎপর হন বিশেষজ্ঞরা। অনুসন্ধানে দেখা যায় এই একই ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছিল ৯ জানুয়ারি ২০২৪-এ। তবে ক্যাপশন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তবে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটিকেই ভারতের নাম করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্ত করা হচ্ছে মানুষকে। আসল ভিডিয়োটি আসলে মালয়শিয়ার। আসল ভিডিয়োটির উপরে ক্যাপশনে লেখা ছিল, 'মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূল রেলওয়ে ট্র্যাক পাত বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।'শেয়ারিং ট্রাভেল নামে একটি হ্যান্ডেল শেয়ার করা হয়েছিল আসল ভিডিয়োটি।
এই ভিডিয়োটি ৭ জানুয়ারি চিনের ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম 'ixigua'-এ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিয়োটির ক্যাপশনেও উল্লেখ করা হয়েছে ঘটনাটি মালয়শিয়ার।
অনুসন্ধানের আরও দেখা যায়, এপি-র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও ২০২৩ সালে ১৬ ডিসেম্বর এই ভিডিয়োটি পোস্ট করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর সঙ্গে সেই ভিডিয়োটিও হুবহু মিলে গিয়েছে। এপি-র ভিডিয়ো ক্যাপশনে লেখা ছিল, 'চিন সমর্থিত মালয়েশিয়ান রেলপথ ট্র্যাকে চলে এসেছে।'
সিদ্ধান্ত
এত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে রেলওয়ে ট্র্যাক লাইং মেশিনের (রেললাইনে পাত বসানোর মেশিন) যে ভিডিয়োটি বর্তমানে ভারতের বলে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে তা আসলে ভুয়ো। ভিডিয়োটি মোটেও ভারতের নয়। এটি মালয়শিয়ার। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দাবিতে ভিডিয়োটিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই দাবি অসত্য।
(This story was originally published by PTI News and republished by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)