এই সময়: এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে রাসবিহারী মোড়ের কাছে যাওয়ার জন্য অ্যাপ ক্যাব বুক করেছিলেন এক যাত্রী। অ্যাপে এসি এবং নন-এসি—দু’রকম গাড়ি বুকের অপশন ছিল। প্রবল গরম ও চরম অস্বস্তিকর আদ্রতা থেকে বাঁচতে স্বাভাবিক ভাবেই এসি গাড়ি বুক করেন তিনি। ক্যাবে ওঠার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে গরম লাগতে শুরু করে ওই যাত্রীর।ড্রাইভারকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন, ‘গাড়ির ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার জন্য’ আপাতত এসিটা বন্ধ রেখেছেন তিনি। গাড়ির কাচ তোলা ছিল, তাই কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাঁসফাঁস করতে শুরু করেন ওই যাত্রী। ওই একবার নয়, পরের প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ক্রমাগত এসি চালিয়ে গাড়ি ‘ঠান্ডা’ এবং কয়েক মিনিট পরেই ‘যথেষ্ট ঠান্ডা হয়েছে’ বলে এসি বন্ধ করতে করতে যাত্রীকে গন্তব্যে নিয়ে গেলেন ড্রাইভার।
যাত্রী বলছেন, ‘ডব্লিউবি ০৫০৪০৭ গাড়ির চালক রাজু কিন্তু যাত্রীদের রেটিং অনুযায়ী ৫-এর মধ্যে ৪.৭৫ পেয়েছেন। অর্থাৎ ধরেই নিতে হয় তিনি যথেষ্ট পেশাদার মানসিকতার। তবে তেমন হলেন কোথায়? আমি ৫১৫ টাকা দিয়ে এসি গাড়ি বুক করেছিলাম, নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এসির স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করব বলে। মাঝে মাঝে ওঁর মর্জিতে এসি বন্ধ হবে কেন?’
চালকদের এমন আচরণ যে অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কর্তাদের নজরে আনবেন যাত্রীরা, তারও উপায়ই নেই। কারণ শহরে যতগুলো অ্যাপ ক্যাব সার্ভিস প্রোভাইডারের গাড়ি চলে, তাদের একটিরও অফিস নেই। দিল্লি অথবা মুম্বইয়ে বসে ওই সংস্থাগুলো কলকাতার পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু তা-ই নয়—অনলাইন ক্যাব সংস্থাগুলোর কাস্টমার কেয়ার বলেও কিছু নেই, যেখানে যাত্রীরা সমস্যার বিষয়গুলো জানাতে পারেন।
কাস্টমার কেয়ার না থাকায় কাস্টমারদের থোড়াই কেয়ার করেন অ্যাপক্যাব চালকরাও। গত কয়েক বছর এ ভাবেই চলেছে কলকাতার অনলাইন ক্যাব ব্যবস্থা। শহরের অনলাইন ক্যাবচালকদের সংগঠন, অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষেবার অব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে বলছেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের কাছে আবেদন করে আসছি, এই বিষয়টায় নজর দেওয়ার জন্য। শহরে ওদের একটাও অফিস নেই। কোনও সমস্যা হলে অনলাইন ক্যাব সার্ভিস প্রোভাইডারদের এমন কোনও প্রতিনিধিকে পাওয়া যায় না যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। প্রতিদিন অব্যবস্থা বাড়ছে। কোনও প্রতিকার নেই।’
অ্যাপ ক্যাব সার্ভিস প্রোভাইডারদের শহরে কোনও অফিস না থাকাটা যে সুস্থ পরিষেবার পথে বড় বাধা—এমনটাই মনে করেন রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরাও। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলছেন, ‘আমরা একাধিক বার ওঁদের এই বিষয়ে জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বার আমাদের কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অ্যাপক্যাব চালকদের একাংশ এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘শহরে এখন অন্তত চার-পাঁচটি সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে। সুতরাং আমাদের পেশায় প্রতিযোগিতা অনেকটাই বেড়েছে। এর উপর গাড়ির মালিককে নিয়মিত টাকা দিয়ে, তেল কেনার টাকা এবং সার্ভিস প্রোভাইডারকে কমিশন দিয়ে আমাদের হাতে খুব বেশি কিছু থাকে না। তাই আমাদের চেষ্টা থাকে সব রকমের খরচ বাঁচানো।’