• Election Commission : স্বচ্ছ ভোটের ভরসা এআই নিয়েই নাস্তানাবুদ নির্বাচন কমিশন
    এই সময় | ০৫ এপ্রিল ২০২৪
  • একেই বোধহয় বলে প্রযুক্তির বিড়ম্বনা! যা নিয়ে ভোটের মুখে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসিআই)। দিন কয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের দুই পরিচিত রাজনীতিবিদের নাম করে একটি বিতর্কিত অডিয়ো ক্লিপ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় (ক্লিপের সত্যতা ‘এই সময়’ যাচাই করেনি)।সেটি শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির কবীরশঙ্কর বসুর (যিনি কল্যাণের প্রাক্তন জামাই) বলে দাবি। ফোনালাপ কী নিয়ে? সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে প্রথম ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি কিন্তু খুব চাপে আছি। টিকিটটা নাও তুমি।’ দ্বিতীয় ব্যক্তির জবাব, ‘অনেক অসুবিধা আছে। চেষ্টা করছি।’ পাল্টা উত্তর আসে, ‘যা দরকার করো। কিন্তু মালটা নিয়ে যাও।’

    এবার দ্বিতীয় জন বলেন, ‘কুড়ি পৌঁছে দিতে হবে।’ এবং এর পরেই প্রথম ব্যক্তি এক পরিচিত রাজনৈতিক নেতার শুধু নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি যেন জানতে না পারেন। তাঁকে আশ্বস্ত করেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। এরপরে রেখে দেওয়া হয় ফোন।

    এই বার্তালাপেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। পরে দু’জনেই দাবি করেন, অডিয়ো ক্লিপের কথোপকথন তাঁদের নয়। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন দু’জনেই। তারপর ডিএমের কাছে তড়িঘড়ি রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় সিইও-র দপ্তর।

    এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কল্যাণ বলেন, ‘কমিশন বিষয়টা দেখছে। কে বা কারা করেছে, তা নিয়ে আমি এখনই কিছু বলব না। জড়িতদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব কমিশনের।’ কবীরের বক্তব্য, ‘আমি চাই, এর যথাযথ তদন্ত হোক। কারা এটা করেছে, সেটা খুঁজে বের করা হোক। প্রয়োজনে আমি আইনি পদক্ষেপ করব।’

    এ দিকে, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এ বারই প্রথম লোকসভা ভোটে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর সাহায্য নিচ্ছে ইসিআই। এতে ভোট পরিচালনার কাজে কমিশনের বিশেষ সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু সেটাই এখন কমিশনের কাছে বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!

    ভোটের প্রাক্কালে এআইয়ের সাহায্যে ওই অডিয়ো ক্লিপের মতো নানা বিতর্কিত ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। যে কারণে অনেক প্রার্থী সম্পর্কেই জনমানসে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তিও। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে কমিশনের।

    ইসিআইয়ের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘ভোটের দিন যত এগোবে, এ ধরনের প্রবণতা আরও বাড়বে। কিন্তু মুশকিল হলো, এর মোকাবিলার মতো তেমন উন্নত প্রযুক্তি বা টেকনিশিয়ান আমাদের কাছে নেই। সে জন্য আমরা এখন একজন সত্যান্বেষীর খোঁজ করছি, যিনি আমাদের এআইয়ের ছলচাতুরি ধরিয়ে দেবেন।’

    ভারতে নতুন হলেও নির্বাচনের সময়ে এআইয়ের অপব্যবহার অন্যান্য দেশে হয়েছে। যেমন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগেই সেখানকার অন্যতম প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী রুমিন ফারহানা এবং নিপুণ রয়ের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার একটি ফেক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, সেটি এআইয়ের সাহায্যে বানানো।

    দিন কয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অপহরণের একটি ভুয়ো ভিডিয়ো পোস্ট করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেটিও এআই দিয়েই বানানো বলে খবর। সেই সিলসিলাতেই সম্ভবত সাম্প্রতিকতম সংযোজন হুগলির ওই দুই প্রার্থীর অডিয়ো ক্লিপটি।

    এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী বৃহস্পতিবার ‘এই সময়’কে জানান, এই ক্লিপ নিয়ে জেলা থেকে রিপোর্ট আসার পর সেটি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, অডিয়ো ক্লিপটি পরীক্ষার জন্য আইটি সেলে পাঠানো হবে। তারা প্রথমে সেটা পরীক্ষা করে দেখবে।

    সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে কমিশন। কে বা কারা অডিয়ো ক্লিপটি ছড়িয়েছে, তাদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, কমিশনের কাছে যে প্রাথমিক রিপোর্ট ডিএমের কাছ থেকে জমা পড়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে যে ওই অডিয়ো ক্লিপটি কারও বানানো।

    কমিশনের আধিকারিকরা মনে করছেন, সম্ভবত এআই প্রযুক্তির সাহায্যে দুই যুযুধান প্রার্থীর স্বর ক্লোন করে ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে।

    বিতর্কিত এই ক্লিপ প্রথম পোস্ট করা হয় ‘কমরেড’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে। তার ঠিক পরপরই শ্রীরামপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের প্রচারের ছবি পোস্ট করা হয়। ঘটনার পরম্পরা দেখে অনেকে মনে করছেন, ঘটনার নেপথ্যে বামেদের হাত থাকতে পারে।

    দীপ্সিতা অবশ্য তেমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘কাল আমি যদি ‘মমতার সৈনিক’ নামে দিয়ে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে কোনও কিছু পোস্ট করি, তাহলে কি আমি তৃণমূল হয়ে যাব? যে অডিয়োর কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমি এখনও শুনিনি। তাই এর সত্যতা নিয়ে কোনও কমেন্ট করব না। এই অডিয়ো যদি আমাদের তৈরি করা হতো, তা হলে আমি সেটাকে প্রচারেও ব্যবহার করতাম। আজ পর্যন্ত এ নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করিনি। সবটাই তৃণমূল-বিজেপির সেটিং।’
  • Link to this news (এই সময়)