নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় ধৃত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন নিয়ে রায়দান স্থগিত রেখেছে দিল্লি হাইকোর্ট। তবে, তাঁকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের দাবিতে দিল্লি হাইকোর্টেই দায়ের হয়েছিল আরও একটি জনস্বার্থ মামলা।সেই মামলা বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি মনমোহনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের বক্তব্য, ‘গণতন্ত্রকে নিজের পথে চলতে দিন।’ দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ২১ মার্চ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আবগারি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ‘কিংপিন’ বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
মুখ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে দিল্লিতে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এই যুক্তিতে কেজরিওয়ালের অপসারণ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছিল হিন্দু সেনা। তাদের আবেদন ছিল, দিল্লির উপরাজ্যপাল যাতে কেজরিওয়ালকে অবিলম্বে পদত্যাগের নির্দেশ দেন, তা নিশ্চিত করুক হাইকোর্ট।
কিন্তু আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনাকে আমাদের গাইড করার কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার কেউ নই। আইন মোতাবেক তিনি যেটা করতে চাইবেন, সেটাই করবেন। গণতন্ত্রকে নিজের পথে চলতে দিন। ব্যক্তিগত আক্রোশকে নয় জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। তার পরও যদি পদত্যাগের বিষয়টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তবে অন্য ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করুন।’
গত সপ্তাহেও এমনই একটি মামলা দায়ের হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। সেই আবেদনও খারিজ করেছিল আদালত। প্রসঙ্গত, কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলে সরব হয়েছে বিজেপি। এমনকী দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনাও ক’দিন আগে বলেছেন, ‘দিল্লির সরকার জেল থেকে চলবে না।’
এদিকে আম আদমি পার্টি (আপ)-ও জানিয়ে দিয়েছে, কেজরিওয়ালের পদত্যাগের প্রশ্নই নেই। এ দিন সেই কথাই ফের একবার শোনা গেল আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের মুখে। আবগারি দুর্নীতি মামলায় ছ’মাস তিহাড় জেলে কাটিয়ে জামিনে বুধবারই মুক্তি পেয়েছেন সঞ্জয়।
তাঁর বক্তব্য, ‘দিল্লির উপরাজ্যপাল কি কেজরিওয়ালকে নির্বাচন করেছেন? দিল্লির ২ কোটি মানুষ কেজরিওয়ালকে বেছে নিয়েছেন। বিনামূল্যে শিক্ষা, পানীয় জল, বাস সফর, যুবকরা চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মানুষের ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র বিজেপি চাইছে বলে তিনি পদত্যাগ করবেন? তা হলে তো বিজেপি এটাকেই ট্রেন্ড বানিয়ে ফেলবে। ওরা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, পাঞ্জাবের ভগবন্ত মানকেও গ্রেপ্তার করাবে আর পদত্যাগ করতে বলবে। এ ভাবে চলতে থাকলে বিজেপি বাদে কোনও দলই আর দেশে থাকবে না। বিজেপির দাবি মেনে নিলে দেশে গণতন্ত্র, জনাদেশ বলে কিছু থাকবে না।’
কেজরিও যে পদত্যাগের পথে হাঁটছেন না, সেটা তাঁর বৃহস্পতিবারের ভিডিয়ো বার্তাতেও স্পষ্ট। আগের কয়েকবারের মতো এ বারও স্ত্রী সুনীতা মুখ্যমন্ত্রীর জেল থেকে পাঠানো বার্তা পড়ে শুনিয়েছেন। জেল থেকে পাঠানো চিঠিতে কেজরির বক্তব্য, ‘আমি জেলে আছি বলে দিল্লির মানুষ ভুগবেন, এটা হতে পারে না। প্রত্যেক বিধায়কের কাছে অনুরোধ, প্রতিদিন নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে যান। মানুষের সমস্যার সমাধান করুন। দিল্লির ২ কোটি মানুষ আমার পরিবার। আমার কারণে যেন কেউ অখুশি না থাকেন।’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিন সুনীতার ভিডিয়োর ব্যাকগ্রাউন্ডে বি আর আম্বেদকর আর ভগৎ সিংয়ের ছবির মাঝে দেখা গিয়েছে জেলবন্দি কেজরিওয়ালের একটা ছবি। যা তুলে ধরে বিজেপির কটাক্ষ, ‘কেজরিওয়াল কি এবার নিজেকে আম্বেদকর, ভগৎ সিংয়ের সমকক্ষ ভাবছেন?’