এই সময়: কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নজরে রয়েছে বাংলা—কী ভাবে নরেন্দ্র মোদী এ কথা বলতে পারেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।বৃহস্পতিবার কোচবিহারে নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘এবার নির্বাচন কমিশন অনেক জাগ্রত রয়েছে। আপনাদের এক একটি ভোটের ক্ষমতা ওঁরা জানেন। এই কারণে সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে বাড়ি থেকে বেরোন।’ নমোর জনসভার আগে মমতা এ দিনই কোচবিহারের মাথাভাঙা এবং জলপাইগুড়ির মালে পরপর দু’টি জনসভা করেন।
দু’টি সভাতেই নির্বাচন কমিশনের উপরে বিজেপি প্রভাব খাটাচ্ছে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। জোড়াফুল নেতৃত্বের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কমিশনের কী ভূমিকা হবে, তা নিয়ে কোচবিহারের সভার কয়েক দিন আগেও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন মোদী। তাই এদিন নমো কোচবিহারে পা দেওয়ার আগেই মমতা তাঁকে নিশানা করেছেন।
জলপাইগুড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘হেলিকপ্টারে আসতে আসতে একটি সংবাদপত্রে দেখলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বাংলায় পুরো নজর রাখবে। আরে! আপনি বলার কে? তার মানে ইলেকশন কমিশনও কিনে নিয়েছেন? বলে দিচ্ছেন, রোজ ওকে ট্রান্সফার করো, রোজ ওর বাড়িতে ইনকাম ট্যাক্স পাঠাও, কানে কানে বলে দাও বিজেপি করলেই সাদা আর তৃণমূল করলেই কালো? বাঃ-বাঃ-বাঃ দারুণ নাটক।’
কোচবিহারের সভায় আবার কমিশনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সমালোচনা করছি না, কিন্তু আমার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। আমি কমিশনকে অনুরোধ করব, বিজেপি কী ভাবে গুন্ডামি করছে, তা দেখুন। কী ভাবে বিএসএফ, সিআইএসএফ, ইনকাম ট্যাক্স বিজেপির পক্ষে থাকছে দেখুন। মানুষকে হেনস্থা করছে, অত্যাচার করছে। এটা গণতান্ত্রিক লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে পারে না।’
ঘটনাচক্রে মমতার ভাষণের কিছুক্ষণ পরেই কোচবিহারের সভায় মোদী বলেন, ‘অনেক গরম পড়বে। কিন্তু যত গরম পড়ুক না কেন, সূর্য উঠলেই ভোট দিতে চলে যান। ভোর ভোর ভোট দিয়ে দিন। তৃণমূলের গুন্ডারা আপনাদের যদি ভোট দিতে বাধা দেয়, তা হলে পুরো শক্তি নিয়ে দাঁড়াবেন। এবার নির্বাচন কমিশন অনেক সজাগ রয়েছে।’
যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি আদতে কমিশনকে প্রভাবিত করতে চাইছে। কমিশনের নজরদারি সত্ত্বেও বিজেপি মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও মমতা মনে করছেন। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘সব এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে। রাজ্য সরকারের অফিসারদের ট্রান্সফার করছে। কিন্তু এনআইএ, ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সের মতো এজেন্সি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কতজনকে ট্রান্সফার করা হয়েছে?
বাংলায় আমি সামলে নেব। আমি থাকাকালীন ওদের ক্ষমতা নেই বাংলার মানুষের গায়ে হাত দেওয়ার। বিজেপির প্রার্থীরা ভয় দেখালে থানায় এফআইআর করবেন। আমি দেখে নেব। যদি পুলিশ ডায়েরি না নেয় আমাকে লিখে পাঠাবেন। উত্তরবঙ্গে সচিবালয় রয়েছে সেখানে জানাবেন। ই-মেল করবেন। পোস্ট কার্ডে জানাবেন।’
রাজ্যে নারী নির্যাতন ও হিংসার ইস্যুতেও এদিন মোদী-মমতার বাগযুদ্ধ চরমে উঠেছে। মোদী যেখানে কোচবিহারে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির ঘটনাকে হাতিয়ার করেছেন, সেখানে মমতার ভাষণে মণিপুরের অশান্তি, নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ এসেছে। কিছু দিন আগে বারাসতের সভাতেও মোদী সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন।
এ দিন ফের তিনি বলেন, ‘মা-বোনেদের উপরে যে অত্যাচার হচ্ছে, তা বিজেপি বন্ধ করতে পারবে। সন্দেশখালির দোষীদের বাঁচাতে কী ভাবে তৃণমূল সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে, তা সারা দেশ দেখেছে। সন্দেশখালির দোষীদের সাজা দেওয়া বিজেপির সংকল্প। সারা জীবন ওঁদের জেলেই থাকতে হবে। তাই সব বুথে পদ্মফুলে ছাপ দিতে হবে।’
পাল্টা ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষের মতো তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে নারীদের উপর যে নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে নীরব রয়েছেন। মমতা নিজেও এ দিন বলেছেন, ‘বিলকিসের উপর অত্যাচার আপনারা দেখেননি?
কুস্তিগিরদের উপর অত্যাচার দেখেননি? গুজরাটের দাঙ্গা দেখেননি? মণিপুরে দু’শো চার্চ পুড়িয়ে দিয়েছে, দেখেননি? মসজিদে বোমা মারা হয়েছে, মন্দির নষ্ট করেছে সেটা দেখেননি। মহিলাদের নগ্ন করে প্যারেড করানো হয়েছে। এই হচ্ছে বিজেপি।’