অন্যান্য দিনের মতোই সকালে ইকবালপুরের একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে ট্রাফিক সামলাচ্ছিলেন সার্জেন্ট অরিত্র মুখোপাধ্যায় এবং পলাশ হালদার। হঠাৎই ভেসে আসে এক খুদের আওয়াজ। 'আমাকে এখান থেকে বার কর'...গেটের উলটো দিকে দাঁড়িয়েছিল স্কুলের বাসগুলি। প্রাথমিকভাবে ট্রাফিক সার্জেন্টরা মনে করছিলেন আওয়াজ আসছে ওই বাসগুলি থেকেই। তাঁরা দৌড়ে যান বাসটির কাছে। দেখতে পান বাসের ভেতর আটকে রয়েছে এক খুদে ছাত্রী। তাকে রেখেই বাস লক করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাসের মালিক। এদিকে ঘুম থেকে উঠে বন্ধ বাসে কান্নায় ভাসেন মনুশ্রী রায়। হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা তিনি। বাস চালকের খোঁজ না মেলায় সময় নষ্ট না করে কর্মরত দুই সার্জেন্ট বাসের দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন ছাত্রীটিকে।
শুক্রবার ইকবালপুরের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। ছাত্রীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, অন্যান্য পড়ুয়াদের বাস থেকে নামিয়ে দিলেও এক বাচ্চা যে ঘুমিয়ে রয়েছে, তা খেয়ালও করেননি ড্রাইভার। তাকে বাসের মধ্যে রেখেই দরজায় তালা দিয়ে দেন তিনি।
এরপর ঘুম ভাঙলে বাসের মধ্যে কাঁদতে থাকেন ওই শিশু। ট্রাফিক সার্জেন্টরা গিয়ে উদ্ধার করেন তাকে। শিশুটিকে উদ্ধার করার পর ট্রাফিক পুলিশের তরফে স্কুলে গোটা বিষয়টি জানানো হয়। ওই শিশুটির বাড়িতেও দেওয়া হয় খবর। তার পরিবারের দাবি, অন্যান্যদিন বাসে একজন হেল্পার থাকেন। কিন্তু, তিনি এদিন ছিলেন না। পরিবর্তে ওই বাসের মালিকই হেল্পারের জায়গায় ছিলেন। আমরা স্কুল থেকে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পৌঁছয়। এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটতে পারে তা ভাবতেও পারিনি।'
এই বাসের মালিক একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'শিশুটি ঘুমিয়ে পড়েছিল দেখিনি। গত ২৫ বছর ধরে এই কাজ করে এসেছি। কোনওদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। একটা আধটা ভুল হতেই পারে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে তার চেষ্টা করব।'
এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল জানান, পুরো ঘটনা প্রসঙ্গে বাসের মালিকের থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে? তা বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে। কোনও পক্ষের গাফিলতি সামনে এলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে ইতিমধ্যেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শিশুটিকে। ওই দুই ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিশুর পরিবারের সদস্যরা।