এই সময়: ওয়াটগঞ্জের বাসিন্দা দুর্গা সরখেলকে (৪০) নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতের নাম, শুদ্ধনীলাঞ্জন সরখেল। সম্পর্কে তিনি দুর্গার ভাসুর হন। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গার সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে গত ৬ মাস ধরে বিবাদ চলছিল অভিযুক্তের।অভিযোগ, পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে দুর্গার ছেলেকেও চক্রান্ত করে মায়ের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নিহতের বাপের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, শুদ্ধনীলাঞ্জন তন্ত্র সাধনা করতেন। তিনি দুর্গাকে বলি দিয়ে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দিয়েছেন। এই অভিযোগের সত্যতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন, দুর্গার বাড়িতে রাতের দিকে প্রায়ই অশান্তি হতো। বাড়ির ভেতর থেকে মহিলার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত। তবে, ওই বাড়ির কেউ পাড়ার লোকেদের সঙ্গে না মেশায় ঠিক কী নিয়ে ঝামেলা হতো, সে বিষয়ে কারও কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
তবে, দেহ উদ্ধারের আগের রাতে কোনওরকম চিৎকার তাঁদের কানে আসেনি বলে প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। বুধবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পরে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ গ্রেপ্তার করা হয় শুদ্ধনীলাঞ্জনকে। ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার ভোর ৪টে ৫৫ মিনিট নাগাদ শুদ্ধনীলাঞ্জন সাইকেলে চেপে কালো প্যাকেটে করে কিছু নিয়ে যাচ্ছেন। মোট দু’বার তাঁকে আসা যাওয়া করতে দেখা যায়।
ওইদিনই দুপুরে পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টার থেকে দুর্গার দেহের টুকরো পাওয়া যায়। তাই সাইকেলে নিয়ে যাওয়া প্যাকেটেই দেহের টুকরো ছিল বলে অনেকটা নিশ্চিত গোয়েন্দারা। দেহের বাকি অংশ গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ধৃত ব্যক্তি সম্ভবত একাই খুন করেছেন।
তবে জেরার সময়ে তিনি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে তদন্তকারীদের সামনে আওড়ে চলেছেন, সিসিটিভিতে যে ছবি দেখা যাচ্ছে তা থেকে তিনি যে ঘটনায় যুক্ত এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। এদিন মৃতার স্বামী ধোনি সরখেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, তিনি এক সময়ে রেলে চাকরি করতেন। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ার পরে তাঁকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে তিনি কিছুই করতেন না। স্ত্রীর খুনের ঘটনায় ধোনির কোনও যোগ এখনও পর্যন্ত উঠে আসেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন,‘টাকাপয়সা নিয়ে গন্ডগোলের কারণে এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এর বাইরে আর কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এসএসকেএ হাসপাতালে দুর্গার দেহের টুকরো অংশগুলির ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ হয়েছে ইতিমধ্যেই। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, ধারালো কোনও অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয়েছে দুর্গাকে। যদিও এখন পর্যন্ত দেহের সব অংশ উদ্ধার হয়নি। এদিন ধৃতকে আলিপুর আদালতে পেশ করে পুলিশ। সরকারি আইনজীবী জানান, দুর্গার শরীরের সব টুকরো এখনও মেলেনি।
ফলে ঠিক কী কারণে খুন, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না, তা জানতেই ধৃতকে হেফাজতে নেওয়াটা জরুরি। যার ভিত্তিতেই শুদ্ধনীলাঞ্জনকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। দুর্গার বাবা কৈলাস সাউয়ের বক্তব্য,‘মেয়ে যে নিখোঁজ তা আমাদের জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যম থেকেই সব জেনেছি। যে বা যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাঁদের কঠোর শাস্তি হোক।’