• জলস্তর কমছে গঙ্গায়, গরম পড়তেই জলসঙ্কটের ভ্রূকুটি
    এই সময় | ০৫ এপ্রিল ২০২৪
  • সৌমিত্র ঘোষ : এপ্রিলের গোড়া থেকেই চরম গরম পড়ে গিয়েছে। হাওয়া অফিসের কথায়, চলতি সপ্তাহে পারদ আরও চড়বে। এই প্রবল গরমে জলসঙ্কটের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন বালি পুর কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, জানুয়ারিতেই গঙ্গায় জলস্তর নেমে যাওয়ায় বেলুড়ের কেএমডিএর ইনটেক পয়েন্টে জল তুলতে সমস্যার কারণে তীব্র জলকষ্ট দেখা দিয়েছিল বালি পুর এলাকার বেলুড় ও বালিতে।একই সঙ্গে বিগড়েছিল ইনটেক পয়েন্টের একটি পাম্পও। তখনকার মতো পাম্প সারিয়ে সমস্যার আপাত সুরাহা হলেও বালি পুরসভার জল সঙ্কট মেটেনি আজও। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেএমডিএর ইঞ্জিনিয়াররা গঙ্গার গভীরে নতুন ইনটেক পয়েন্ট করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছেন। এখন ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে।

    সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নতুন ইনটেক পয়েন্ট তৈরিতে আরও এক বছর লেগে যেতে পারে। ততদিন পুরোনো ইনটেক পয়েন্ট থেকে পরিকল্পনামাফিক জল তুলে সঙ্কট মোকাবিলাই চ্যালেঞ্জ পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। মূলত বেলুড়ের বিকে পাল টেম্পল রোডের জগন্নাথ ঘাটের কাছে কেএমডিএর জলপ্রকল্পে গঙ্গার ঠিক যে জায়গা থেকে জল তোলা হয়, সেখানে পলি জমে নদীতে বিস্তীর্ণ চড়া পড়েছে।

    ফলে ভাটার সময় ইনটেক পয়েন্টের পাম্প চালানো যাচ্ছে না। শুধুমাত্র বালি পুর এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহের জন্য কেএমডিএর এই জলপ্রকল্পের ইনটেক পয়েন্টের একটি পাম্প বিকল হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। সেই সময় বেলুড় ও বালিতে তীব্র জল সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় জলের গাড়ি পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ।

    পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠলে বালি পুরসভার নিজস্ব জলের গাড়িতেও টান পড়ে। তখন লাগোয়া উত্তরপাড়া পুরসভা, হাওড়া ও কলকাতা পুরনিগম থেকে জলের গাড়ি এনে সামাল দেওয়া হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, বিকল পাম্পটির বহু যন্ত্রাংশ গঙ্গার পলিতে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিকল পাম্প সারাতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ বিলক্ষণ বুঝতে পারেন সঙ্কটের শেষ এখানেই নয়।

    বেলুড়ের দিকে পলি জমে জমে জেগে ওঠা চরের জন্য ইনটেক পয়েন্ট থেকে জল তোলাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেলুড়ের জগন্নাথঘাটে আগে যেখানে ১৬০টি সিঁড়ি ছিল এখন মোটে কুড়িটি দেখা যায়। ফলে প্রতিদিনই জল তোলার জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এখন গরমে স্বভাবতই বেড়েছে জলের চাহিদা।

    এ ভাবে শুধু জোয়ারের ভরসায় কঠিন দিনগুলিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হবে না বিলক্ষণ বুঝছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে নতুন করে ইনটেক পয়েন্ট তৈরির জন্য শুরু হয়েছে উদ্যোগ। বালির প্রাক্তন কাউন্সিলার ও হাওড়া পুর নিগমের প্রশাসনিক বোর্ডের অন্যতম সদস্য রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গ্রীষ্মের জন্য আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। সমাধান হিসেবে বালিতে রবীন্দ্রভবনের কাছে জল তোলার জন্য নতুন ইনটেক পয়েন্ট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

    কেএমডিএর ইঞ্জিনিয়াররা রবীন্দ্রভবনের কাছে গঙ্গার গভীরে ইনটেক পয়েন্ট করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছেন। এখন ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে। নতুন ইনটেক পয়েন্ট তৈরিতে আরও এক বছর লেগে যেতে পারে। ততদিন রীতিমতো অঙ্ক কষে পুরোনো ইনটেক পয়েন্ট দিয়ে জল তুলে জল সঙ্কট মোকাবিলা করতে হবে।

    এই মুহূর্তে বেলুড়ের কেএমডিএ জলপ্রকল্পের দৈনিক সর্বোচ্চ জল উৎপাদন ক্ষমতা ৪৮ মিলিয়ন গ্যালন। তার ৮০% অর্থাৎ ৩৮-৪০ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। পুরসভা সূত্রে খবর এই মুহূর্তে ৩৫ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরে হুগলির শ্রীরামপুরে বালি পুরসভার নিজস্ব জল প্রকল্প থেকে পাওয়া প্রতিদিন ৫-৬ মিলিয়ন গ্যালন জল বালির একাংশে জলের চাহিদা মেটাচ্ছে।

    জল সরবরাহের সময়ের কিছুটা হেরফের করা হয়েছে। অনেক এলাকায় সকালের দিকে একটানা ৩ ঘন্টা জল দেওয়ার পরিবর্তে এক থেকে দেড় ঘণ্টা জল দিয়ে আবার দুপুরে ও বিকেলে জল দেওয়া হচ্ছে। এভাবে দিনে ৫-৬ ঘন্টা জল সরবরাহ করে সঙ্কট মোকাবিলা করা যাচ্ছে। তবে সব সময়েই ঘরপোড়া গোরুর মতো তটস্থ থাকতে হয় জল সরবরাহ বিভাগের কর্মী-আধিকারিকদের।
  • Link to this news (এই সময়)