• বিক্ষোভের মুখে লকেট? ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জেনে নিন
    এই সময় | ০৬ এপ্রিল ২০২৪
  • রাজ্যের ৪২ লোকসভা কেন্দ্রের অন্যতম হুগলি। এবার সেই কেন্দ্র থেকে মুখোমুখি লড়াইতে ২ অভিনেত্রী। গত লোকসভা ভোটে ওই আসন থেকেই জয়ী হন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। এবারের নির্বাচনে ফের একবার তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্যদিকে ওই আসন থেকে 'দিদি নং ১' রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থীপদ দিয়েছে তৃণমূল। উভয় পক্ষই ইতিমধ্যেই তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নেমে পড়েছে। এরই মাঝে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া একটি ভিডিয়োকে ঘিরে শুরু হয় তুমুল চর্চা। যে ভিডিয়োতে দেখা যায় লকেট চট্টোপাধ্যায়কে কার্যত তাড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। একইসঙ্গে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যান্য বিজেপি নেতা কর্মীদের নৌকা থেকে নামতে বাধা দিচ্ছেন কিছু মহিলা।দেখা যায় এক ফেসবুক ইউজার ভিডিয়োটি পোস্ট করে ফ্রেমের মধ্যে লেখেন, "নিজের অঞ্চলেই দূর দূর করে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তারিয়ে দিল গ্রামবাসীরা। জাগ্রত জনতা।" ভিডিয়োর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটির ফ্যাক্ট চেক করে সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। ফ্যাক্ট চেক করে ওই সংবাদ মাধ্যম জানতে পারে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিক্ষোভের মুখে পড়ার ওই ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক নয়, ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসের। আর সেই ভিডিয়োটি তাঁর নিজের লোকসভা এলাকারও নয়, বরং সন্দেশখালির।

    ভুয়ো ভিডিয়োর স্ক্রিনশন

    কী ভাবে উঠে এল আসল সত্য?ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম মনে করছে, যেহেতু লকেট চট্টপাধ্যায় খুবই পরিচিত এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাই সাম্প্রতিককালে তিনি কোথাও কোনও বিক্ষোভের মুখে পড়লে সেই খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিশ্চয় উঠে আসত। একইসঙ্গে কী ওয়ার্ড সার্চ করার সময় ইন্ডিয়া টুডে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল 'মমতা ব্যানার্জী সাপোর্টার্স' নামে একটি ফেসবুক পেজেও ওই ভিডিয়োটি দেখতে পায়। আর সেই ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা, "মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে। ঝেটিয়ে বিজেপিকে বিদায় কর।"একইসঙ্গে ভডিয়োর ফ্রেমে লেখা "বিজেপির প্রচারে গেলে বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি লকেট চ্যাটার্জীকে গ্রামের মহিলারা দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। বাংলার মানুষ আপনাদের চিনে গেছে বিজেপি; এই মাটিতে আপনাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলবে না।" ফলে ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম মনে করছে, ওই ভাইরাল ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এবং সেটির সঙ্গে ২০২৪-এর লোকসভা ভোট প্রচারের কোনও সম্পর্কও নেই।

    ভুয়ো ভিডিয়োর স্ক্রিনশট

    এছাড়া ২০১৭ সালের ৩ অগাস্ট এবিপি আনন্দ ডিজিটাল এবং এবিপি আনন্দের ইউটিউব চ্যানেলেও এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এবং একটি ভিডিয়োও খুঁজে পায় ইন্ডিয়া টুডে। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের মাসখানেক পর ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই কলকাতার হাসপাতালে মারা যান সন্দেশখালির এক বৃদ্ধা। মৃতার পরিবারের সঙ্গেই দেখা করতে ২০১৭-র ৩ অগাস্ট দুপুরে ধামাখালি ঘাট থেকে নৌকায় চড়ে সন্দেশখালি ঘাটে পৌঁছন লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর সেখানেই মহিলারা তাঁকে দেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেখানে নৌকা থেকে নামার পরই স্থানীয় মহিলারা লকেটকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। যার জেরে কিছুক্ষণ বিক্ষোভকারীদের বোঝানের চেষ্টা করেন বিজেপি নেত্রী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কোনওভাবেই তাঁর কথা না শোনায় ফিরতে বাধ্য হন তিনি। এছাড়া ২০১৭ সালের ৩ অগাস্ট এই একই তথ্য প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনেও।

    এরপরেই ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট টেক টিম এবিপি আনন্দ এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যবহৃত ছবি এবং ভিডিয়োর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিয়োকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয়। তাতেই ওই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। এর থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিয়োটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, যে নিজের অঞ্চলেই লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা, সেটি আসলে ২০১৭ সালের ৩ অগাস্টের সেটির সঙ্গে হুগলি এবং ভোটের প্রচারে কোনও যোগ নেই।

    (This story was originally published by Aajtak Bangla and republished by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)
  • Link to this news (এই সময়)