চুরু: পারদ চড়ছে প্রকৃতির। নির্বাচনেরও। বৃহস্পতিবারই কোচবিহার যাওয়ার আগে বিহারের জামুইতে একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, 'আজকের ভারত ঘরের ভিতরে ঢুকে মেরে আসে!' শুক্রবার তারই পুনরাবৃত্তি করলেন রাজস্থানের চুরুতে। এ দিন আরও খানিকটা সুর চড়িয়ে বললেন, 'সেনাকে ছাড় দিয়ে দিয়েছি সীমান্তে পাল্টা জবাব দিতে... শত্রুরা জানে এটা মোদী, আর এটা নতুন ভারত... এই ভারত শত্রুর ঘরে ঢুকে তাদের মেরে আসে।' পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের অভিমুখ ছিল পুলওয়ামা সন্ত্রাস ও বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।' প্রচার জুড়ে ছিল পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ ও 'ভারত সরকারের মুখের মতো জবাব।' সেই প্রসঙ্গই তিনি পর পর দু'দিন এমন দু'টি রাজ্যে তুললেন, যেখানে 'পাক বিরোধিতা ও জাতীয়তাবাদের স্লোগানে' ভোট পাওয়া যায় বলে দেখা যাচ্ছে অতীতের ফলাফলে। আর এমন দিনেই মোদী এই কথা বললেন যখন ব্রিটিশ সংবাদপত্র 'দ্য গার্ডিয়ান' এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০ জন ভারত-বিরোধী জঙ্গিকে পাক মাটিতে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল নয়াদিল্লি। এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা 'র' বলেও দাবি করেছে রিপোর্টে। যদিও বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই দাবিকে 'ভুয়ো, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত' বলে মন্তব্য করে উড়িয়ে দিয়েছেন।মোদী এ দিন ওই জনসভায় দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভারত যখন বালাকোট স্ট্রাইক করছিল, তখন তিনি এই চুরুতে সভা করতে এসেছিলেন, আর সেই সময়েই তিনি সকলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন 'এই দেশকে শেষ হতে দেব না।' কংগ্রেসকে একহাত নেন নিয়ে তিনি বলেন, 'যখন আমরা বিমান হামলা এবং সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করি, কংগ্রেস আমাদের সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রমাণ চেয়েছিল... বাহিনীর অপমান এবং দেশ ভাগ করা কংগ্রেসেরই বৈশিষ্ট্য।' তিনি দাবি করেন, বিরেধীরা যখন 'ক্ষমতায় ছিল তখন তারা ফোর্সের হাত বেঁধে রেখেছিল। আমাদের দেশ যখন হামলার মুখে পড়ত, তখন তারা ফোর্সকে পাল্টা জবাব দিতে ছাড়পত্র দেয়নি! এরপরেই তাঁর উক্তি, 'আমরা সেনাকে ফ্রি-হ্যান্ড দিয়েছি। ভারতকে কেউ আক্রমণ করলে তার যোগ্য জবাব তারা পাবেই। এই কথাগুলো তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, সেখান থেকে পাক সীমান্ত খুব দূরে নয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও এ দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'জঙ্গিরা যদি এই দেশকে আক্রমণের পরে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, তা হলে সেখানে ঢুকেই তাদের ভারতীয় সেনা নিকেশ করে আসবে।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, বিহার-রাজস্থানে সেনার আবেগ, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ ও দেশপ্রেম নিয়েই ভোটে মেরুকরণের চেষ্টা করছেন তিনি। ২০১৯-এর ভোটে যে 'সন্ত্রাস হানা ও জবাবি হামলা'র সুফল ইভিএমে প্রতিফলিত হয়েছিল, তা গেরুয়া শিবিরের কেউ-ই অস্বীকার করতে পারবেন না। ফলে মোদীর কথায় এ দিন উঠে আসে, 'ওয়ান র্যাঙ্ক, ওয়ান পেনশন' প্রসঙ্গও। তিনি দাবি করেন, 'আমরা ওয়ান ব়্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন দিয়েছি। তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েছি।'
মোদী অবশ্য এই দু'দিনের কোনও দিনই পাকিস্তানের নাম করেননি। তিনি বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, 'একটি ছোট দেশ, যাদের নাকি খাওয়ার জন্য আটা পর্যন্ত নেই, তারাও এতটাই সাহসী হয়ে উঠেছিল যে ভারতে সন্ত্রাসহানা চালাত। আর তৎকালীন কংগ্রেস সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে শুধু অভিযোগ করত। সেনার মনোবল ভেঙে দিত পাল্টা জবাব দিতে না দিয়ে। কিন্তু আমি ঠিক করি এ ভাবে তো চলতে পারে না। সে জন্যই আজকের ভারত গোটা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে।'
ভারত তার শত্রুদের মুখের মতো জবাব দেয় বললেও, পাকিস্তানের এই টার্গেটেড কিলিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির কোনও সম্পর্ক নেই বলে বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে ওই ব্রিটিশ দৈনিকের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সংবাদপত্রটি ভারত এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, বিদেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের খতম করতে দিল্লির সরকারই নাকি সাম্প্রতিক কালে একাধিক খুনের নির্দেশ দিয়েছে। এমনকী তেমন কিছু 'নথিও' দেখিয়েছেন পাক গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, ২০১৯ সালে পুলওয়ামার পর থেকে বিদেশে জঙ্গি খুনের নীতি গ্রহণ করেছে মোদী সরকার। সেখানে র-কে দিয়ে করানো হয়েছে এ সব কাজ। উল্লেখযোগ্য ভাবে, নিহতদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীদের হাতে।