নয়াদিল্লি: বিজেপিতে যোগ না দিলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে, এভাবেই তাঁকে শাসানো হয়েছে বলে ক'দিন আগে সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ তুলেছিলেন আম আদমি পার্টি (আপ)-এর নেত্রী আতিশি। সেই মন্তব্যের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে আতিশিকে শুক্রবার নোটিস পাঠাল নির্বাচন কমিশন। আতিশির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। শনিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে আতিশিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, আতিশি একজন মন্ত্রী। তিনি প্রকাশ্যে যা বলবেন, ভোটাররা সেটা বিশ্বাস করবেন। ফলে এ ধরনের অভিযোগ আনতে হলে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আগে সেটা প্রমাণ করতে হবে। কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আতিশি প্রকাশ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুললেন, সেটাই লিখিত ভাবে কমিশনের কাছে জানাতে হবে আতিশিকে। আপ নেত্রী অবশ্য বিষয়টা নিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি। আতিশির দাবি, টিভি চ্যানেলে তাঁর নোটিসের খবর ফ্ল্যাশ করার প্রায় আধঘণ্টা পরে তিনি ইসি-র নোটিস পেয়েছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে আতিশির বক্তব্য, 'এতেই স্পষ্ট, নির্বাচন কমিশন মিডিয়াকে প্রথম নোটিসটা দিয়েছে, তার পর আমাকে পাঠিয়েছে! নির্বাচন কমিশন কি বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে? আজ যদি আপনারা নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ভোটের ব্যবস্থা না করেন, ইতিহাস নির্বাচন কমিশনকে খুব খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে রাখবে।'
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার পর আতিশি অভিযোগ তুলেছিলেন, ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারফত বিজেপি তাঁকে শিবির বদলের অফার দিয়েছে। বিজেপিতে যোগ না দিলে আবগারি মামলায় ইডি এক মাসের মধ্যে তাঁকেও গ্রেপ্তার করবে বলে শাসিয়েছে। এই মন্তব্যের জন্য আতিশির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিল বিজেপি, প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিও তুলেছিল। পরে তারা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়।
এদিকে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কেজরিকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে দিল্লির রাউজ় অ্যাভিনিউ আদালত। আপাতত তিহাড় জেলে বন্দি কেজরিওয়াল সপ্তাহে একঘণ্টা করে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাড়ানোর আবেদন নিয়ে দিল্লির সিটি কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেজরি। সেই মামলার রায় সোমবার পর্যন্ত রিজার্ভ রেখেছেন সিবিআই এবং ইডি কেসের স্পেশ্যাল জাজ কাবেরী বাওয়েজা। কেজরির কৌঁসুলির বক্তব্য ছিল, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ঝুলছে। তাই প্রতি সপ্তাহে আইনজীবীর সঙ্গে অন্তত পাঁচ বার সাক্ষাতের সময় দেওয়া হোক। কিন্তু ইডি পাল্টা দাবি করে, প্রতি সপ্তাহে আইনজীবীর সঙ্গে এতবার সাক্ষাৎ জেলের নিয়মবিরুদ্ধ। কেজরি জেলে থেকে সরকার চালাতে চান বলে কোনও বিশেষ সুবিধা দাবি করতে পারেন না।
তবে, জেলবন্দি কেজরির বার্তাবহ হিসেবে বিশেষ নজর কাড়ছেন তাঁর স্ত্রী। কেজরির বন্দিত্বের মেয়াদ বাড়লে তাঁর স্ত্রী সুনীতাই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন, এমন জল্পনাও জোরদার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজের দাবি, ক্রাইসিসের সময়ে দলকে একজোট রাখতে সুনীতা কেজরিওয়ালই 'বেস্ট পার্সন'। আপ নেতার বক্তব্য, 'সুনীতা কেজরিওয়াল বার বারই বলেছেন, তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বার্তাবাহক। কোনও দল শুধু ইস্তেহারের ভিত্তিতে চলে না, দলের কর্মীদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের মানসিক সংযোগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দলকে একজোট রাখতে শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুনীতা কেজরিওয়ালের উপস্থিতি দলে ইতিবাচক প্রভাব এনেছে। তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালজির বার্তা পড়ে শোনাচ্ছেন, সেটা দলের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলকে একজোট রাখতে পারেন সুনীতাই।' দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র মহার্যালিতেও যোগ দিয়েছিলেন সুনীতা। এবার কি আপের লোকসভা প্রচারেও দেখা যাবে তাঁকে? ভরদ্বাজের জবাব, 'তেমন কিছু হলে আমরা খুশিই হব...তবে এটা সুনীতাজির ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।'
Arvind Kejriwal: তিহার জেলে নিয়ে যাওয়া হল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে
আবগারি মামলায় জেলখাটা আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সুনীতা কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করে তাঁর পা ছুঁয়েছেন। এই ছবিই সুনীতার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়েছে। ভরদ্বাজের অবশ্য দাবি, 'বিজেপি বলেছিল, কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হলে আপের মধ্যে অন্তর্কলহ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিজের পরিজন মনে করেন সঞ্জয়, তাই মুখ্যমন্ত্রী-পত্নীর পা ছুঁয়েছেন। আমরা এক দল, এক পরিবার।'
বিতর্কের নেপথ্যে ভগৎ-কেজরি!ইডি হেফাজত থেকে তিহাড় জেল, বন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একাধিক বার্তা ভিডিয়োয় পড়ে শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী-পত্নী সুনীতা। সম্প্রতি সুনীতার ভিডিয়োর ব্যাকগ্রাউন্ডে বি আর আম্বেদকর এবং ভগৎ সিংয়ের ছবির মাঝখানে জেলবন্দি কেজরিওয়ালের ছবি দেখা গিয়েছে। সেটাকে কেন্দ্র করে বিজেপি প্রশ্ন তুলেছিল, কেজরি কি নিজেকে আম্বেদকর, ভগৎ সিংয়ের সমকক্ষ মনে করছেন? এবার ভগৎ সিংয়ের পরিজন যাদবিন্দর সান্ধুর প্রশ্ন, 'কেজরিওয়াল নিজেকে দিক্পালদের সমকক্ষ ভাবছেন? আমরা লেজেন্ডদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারি, তাঁদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা শোভনীয় নয়।' সেই বার্তা তুলে ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর খোঁচা, 'ভগৎ সিং দেশের জন্য লড়েছিলেন, আর কেজরিওয়াল ভারতবিরোধী শক্তিকে সমর্থন করছেন! তাঁদের তুলনা কী ভাবে হতে পারে?' ভগৎ সিংয়ের ভাইপো জগমোহন সিংয়ের অবশ্য দাবি, মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নরেন্দ্র মোদী সরকারই সবচেয়ে বেশি অপমান করেছে ভগৎ সিংকে! আপ অবশ্য এই তরজায় জড়ায়নি। সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের শুধু বক্তব্য, 'লোকে তো ভগৎ সিং, নেতাজি, আম্বেদকরদের মূর্তির সামনে সেলফি তোলে। এখানে পাশাপাশি ছবি রাখলে সমস্যাটা কোথায়?'