• ঠাকুরনগরের মেলায় '১৪৪ ধারা'র আবেদন, শান্তনু-মমতাবালা বিবাদে মতুয়াদের উচ্ছ্বাসে ভাঁটা ...
    আজকাল | ০৬ এপ্রিল ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ, ঠাকুরনগর: মতুয়া ধর্ম মহামেলায় প্রথমবার ১৪৪ ধারা জারি! "আদৌ ঢুকতে পারব মেলায়? কামনাসাগরে পুণ্যস্নান সারতে পারব?" বনগাঁ লোকালে বসে আলোচনা করছিলেন কয়েকজন। রাত পোহালেই ঠাকুরনগরে মহামেলা শুরু। সমস্ত জেলা থেকে মতুয়ারা ঠাকুরবাড়িমুখী। কিন্তু বারুনি মেলায় যাওয়ার আনন্দ কারও চোখেমুখে দেখা যাচ্ছে না। বরং লোকসভা নির্বাচনের আগে ধর্মীয় মেলায় রাজনীতির রঙ লাগায়, যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তাঁরা। শুধু কি বাংলার? মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, এমনকী বাংলাদেশ, মায়ানমার থেকেও ভক্ত সমাগম হয় ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে। ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে পৌঁছে দেখা গেল, ডাঙ্কা, কাঁসর, করতালের আওয়াজের মাঝে আদতেই থমথমে পরিবেশ। দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ও বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর অভিযোগ করেছিলেন, মমতাবালা ঠাকুর মেলা বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। মেলায় ভক্তদের উচ্ছ্বাসে যাতে ভাঁটা পড়ে, তার জন্যেই এই পদক্ষেপ বলে অভিযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু এই "মিথ্যে" অভিযোগ করে মেলা নিয়ে শান্তনু রাজনীতি করতে চাইছেন বলে পাল্টা সরব হলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। শুক্রবার সকালে তুমুল ব্যস্ততার মাঝেই মমতাবালা ঠাকুর বললেন, "এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। ১৪৪ ধারা কোথাও জারি নেই। কয়েকজন দুষ্কৃতী, যারা মেলায় ঢুকে দোকানদারদের হেনস্থা করে, ভাঙচুর করে, গণ্ডগোল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তেমন কয়েকজনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে প্রশাসনকে আবেদন করেছি। মেলা শান্তিপূর্ণ করাই লক্ষ্য আমার।" তাঁর সংযোজন, "এটা রাজনীতির জায়গা নয়। ভক্ত আর ভগবানের মহামিলনের জায়গা এটা। আসলে ডাঙ্কার আওয়াজে অনেকের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চাপা পড়ে যায়। কয়েকদিনের জন্য দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন। সেই আনন্দ কেউ কেউ মাটি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।" বনগাঁর মহকুমা শাসক ঊর্মি দে বিশ্বাস জানালেন, "ঠাকুরনগরের মেলা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে করতে, কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষের তরফে ১৪৪ ধারার আবেদন জমা পড়েছে। তবে এখনও জারি করা হয়নি। পরিস্থিতি দেখে পদক্ষেপ করা হবে।" অন্যদিকে শান্তনু ঠাকুর এখনও নিজের জায়গায় অনড়। আজকাল ডট ইনকে সোজাসাপ্টা বললেন, "১৪৪ ধারার আবেদন করা হয়েছে। এটা মিথ্যে অভিযোগ তো নয়। এর উত্তর ভক্তরা দেবেন। এখন আর কিছু বলব না। সবটাই আদালতে গিয়ে বলব।" ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বহু আগেই ঠাকুরবাড়িতে বিভাজনের রেখা তৈরি হয়েছিল। সিএএ লাগু হতেই শান্তনু আর মমতাবালা ঠাকুরের বিবাদ চরমে ওঠে। সিএএ চালু হওয়ার পর এই প্রথম মতুয়া ধর্ম মহামেলা হচ্ছে। ভোটের মুখে মতুয়াদের মন পেতে, রাজনীতিও কম হচ্ছে না। ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্যের বিবাদে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত মতুয়া সম্প্রদায়। মিলনমেলাতেও তাই নেই আগেকার উচ্ছ্বাস।
  • Link to this news (আজকাল)