• মতুয়া মেলা এখন রাজনীতির ময়দান, শান্তনুকে দুষলেন মমতাবালা...
    আজকাল | ০৬ এপ্রিল ২০২৪
  • পল্লবী ঘোষ, ঠাকুরনগর: ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতি, এদেশে নতুন নয়। তবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি মতুয়াদের ভাবাবেগে যথেষ্ট আঘাত দিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে ঠাকুরনগরের মতুয়া ধর্ম মহামেলার পরতে পরতে যা টের পাওয়া যাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে শুধু নয়, স্টেশন চত্বর থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। বাড়তি পুলিশ বাহিনী দেখে মতুয়াদের ভ্রুও কুঁচকে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে এক টোটো চালক বললেন, "জন্ম থেকে এই এলাকায় আছি। জীবনেও মতুয়া মেলায় এত পুলিশ দেখিনি। ঠাকুরবাড়ির দুজনের ঝামেলা মেলার চেহারাটাই বদলে দিচ্ছে।" এরপরেই তিনি বললেন, "গত ৫ বছরেই এত পরিবর্তন। এর আগেও তো মমতা ব্যানার্জি কতবার এসেছেন। কিন্তু মতুয়াদের আবেগ নিয়ে রাজনীতি করেননি।" "কামনাসাগরের" পাশেই বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কল্যাণী থেকে আসা সুধামা রায় ঠাকুর। ঠাকুরবাড়ির অন্দরের এই ঝামেলা, তা ঘিরে মতুয়াদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ভাল চোখে দেখছেন না তিনিও। তাঁর কথায়, সব "ধর্মের সঙ্গেই ভক্তির যোগ রয়েছে। ভক্তি নিয়েই লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মেলায় আসেন। সেই ধর্মীয় মেলাকে ঘিরে যদি কেউ স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন, তাঁদের মতুয়ারা সমর্থন করবেন না।" পাশে বসে থাকা বনগাঁর এক বাসিন্দা অন্নপূর্ণা বিশ্বাস বললেন, "মেলা ঘিরে আগে যত উন্মাদনা ছিল, সিএএ হওয়ার পর তা খানিকটা কমেছে। মেলার আয়োজন থেকে পরিবেশ, পাঁচ বছরে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।" যদিও নদিয়ার বাসিন্দা সুশীল বোস জানাচ্ছেন, সিএএ-এর কারণে মতুয়া মেলায় এবছর প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের সমাগম হতে পারে। যা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেবে। কিন্তু ভিড় হলেও, সিএএ নিয়ে যে মতুয়াদের পূর্ণ সমর্থন নেই, তাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। মেলা প্রাঙ্গণে ৩০০-র বেশি দোকান বসে। কেনাবেচা চুটিয়ে হলেও, অধিকাংশ দোকানদারই ক্ষুব্ধ। এক দোকানী বললেন, "মেলায় দোকানের লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে প্রতিবারই ঝামেলা হয়। শান্তনু ঠাকুরের দলের তরফে এসে হুমকিও দেয়। আগের বছর মমতাবালা ঠাকুর এক টাকাও নেননি। এবছর আবার ঝামেলার আশঙ্কা করছি।" মেলার বিপুল পরিবর্তন নিয়ে যখন সাধারণ মানুষের এত অভিযোগ সামনে আসছে, তখনই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর বললেন, এর জন্য দায়ী একমাত্র শান্তনু ঠাকুর। তাঁর কথায়, "২০১৯ সালের আগে ভক্তদের মন জয় করতে শান্তনু কথা দিয়েছিল, এই মেলায় রাজনীতির রঙ লাগতে দেবে না। হরিচাঁদ ঠাকুরকে ছুঁয়ে কথা দিয়েছিল, ভোটে দাঁড়াবে না। অথচ ওই এই মেলাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। প্রতিবছর ওর দলের কিছু দুষ্কৃতী মেলায় ঢুকে দোকানদারদের উপর চরম অত্যাচার করে। শান্তনু কথার খেলাপ করে, ভোটে জেতার পর থেকেই সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। মতুয়াদের জন্য মমতা ব্যানার্জি যত কাজ করেছন, তা ভালবেসে করেছেন। তা নিয়ে নোংরা রাজনীতি কখনও করেননি। শান্তনুর হাত ধরেই আরএসএসের সদস্যরা মেলায় এসে হিংসা ছড়ায়। গত পাঁচ বছরে এসবের সাক্ষী ভক্তরা। আশা করছি, এবারের ভোটে তার প্রভাব পড়বে।"
  • Link to this news (আজকাল)