সোশ্য়াল মিডিয়া নিত্যদিনই হাজার হাজার পোস্ট লেখা হয়, সেই পোস্ট আবার শেয়ার হয়। সেগুলির মধ্য়ে কোনও কোনও পোস্ট আবার ভাইরাল হয়। নেটিজেনদের টাইমলাইন শেয়ার বন্যা বয়ে যায় সেইসব পোস্ট। সেগুলির মধ্য এমন অনেক পোস্ট থাকে যেগুলির সত্য নয় কিংবা অর্ধসত্য। অনেক পোস্টে আবার মানুষকে বিভ্রান্তও করা হয়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেরকম পোস্টের সংখ্য়া বাড়ছে।সম্প্রতি সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি পোস্ট যেখানে দাবি করা হয়েছে, সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। কেউ কোনও দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে কথা বললেই ব্য়বস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করা হয়েছে ওই ভাইরাল পোস্টে। ভাইরাল পোস্টটির সত্যতা যাচাইয়ের সময়ের দেখা যায় আসলে যা দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো।
সত্য অনুসন্ধান করেছে বুম নিউজ। কয়েক দিন আগেই রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত ভাবে কোনও প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে কথা বললে যে ইউজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেরকম কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি কমিশন। ১৬ মার্চ নির্বাচন কমিশনের তরফে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়।
কী ভাইরাল হয়েছে?
ভাইরাল মেসেজে দাবি করা হয়েছে, ব্যবহারকারীরা হোয়াটসঅ্যাপ সহ যে কোনও ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডিন ইত্যাদিতে যদি কোনও রাজনৈতিক দল, সরকার বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক এক্স হ্য়ান্ডেল ব্যবহারীর একটি পোস্টে লেখা রয়েছে, 'এতদ্বারা এই গ্রুপের সকল সদস্যদের জানানো হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর, আচরণবিধি কার্যকর হবে। এরপর মন্ত্রক নজরদারি চালাবে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, লিংডিন, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট হ অন্যান্য সমাজ মাধ্যমে কেউ যদি কোনও সরকার বা রাজনৈতিক দলবিরোধী পোস্ট বা কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পোস্ট করেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে কোনও অবমাননাকর বিবৃতি বা পোস্ট করবেন না বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট করবেন না। সদস্যদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ' দেখে নিন সেই সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভুয়ো পোস্ট।
দেখে নিন সেই ভুয়ো পোস্টের স্ক্রিনশট
দেখে নিন সেই ভুয়ো পোস্ট, ছবি সৌজন্য়ে: এক্স
কী উঠে এসেছে ফ্যাক্ট চেকে?
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালায় বুম। ফ্যাক্ট চেকে উঠে এসেছে আসল বিষয়টি। ফ্যাক্ট চেক থেকেই স্পষ্ট নির্বাচন যে আচরণ বিধি জারি করেছে তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য। কমিশনের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। অনুসন্ধানে 'রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আদর্শ আচরণবিধি' (MODEL CODE OF CONDUCT FOR THE GUIDANCE OF POLITICAL PARTIES AND CANDIDATES) শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায় নির্বাচন কমিশনেকর ওয়েবসাইটে। নির্বাচন কমিশনের ওই নোটিশে ভোটের দিনগুলিতে দল ও প্রার্থীদের জন্য় আচরণবিধির উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ক্ষমতায় থাকা দলের জন্য আচরণবিধির উল্লেখ রয়েছে। তবে কমিশনের নোটিশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য় কোনও নির্দেশ, ব্য়বস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
১৭ মার্চ ২০২৪-এ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা দিন থেকে কার্যকর হয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। ওই প্রতিবেদনেও এইরকম কোনও তথ্য উল্লেখ নেই যা ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
সবকিছু ঘটনাক্রম মেলানোর পর এটাই প্রমাণিত হয় ভাইরাল পোস্টটিতে যে দাবি করা হয়েছে তা আসলে সম্পূর্ণ ভুল।
(This story was originally published by Boomlive and republished by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective)