গোঁসা হলেই কথায় কথায় বাপের বাড়ি চলে যেত স্ত্রী। টুকিটাকি অশান্তি কিংবা কথা কাটাকাটি বা নিছকই অজুহাত দেখিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেত স্ত্রী। একাধিকবার বুঝিয়েও কাজ হয়নি। শেষমেশ কোর্টের দ্বারস্থ হন ব্যক্তি। বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন। ব্যক্তির আবেদনে সাড়া দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করল দিল্লি হাইকোর্ট।কোনও কারণ ছাড়াই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় না রাখা ও স্বামীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করার অভিযোগে ছিল স্ত্রীয়ের বিরুদ্ধে। ব্যক্তির আবেদনে সাড়া দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ ছিল, উপযুক্ত কারণ ছাড়াই ঘনঘন বাবার বাড়ি চলে যেতেন স্ত্রী। এছাড়া শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইতেন তিনি। ১৯৯২ সালে বিয়ে হয়েছিল দম্পতির। ২০১৭ সালে ব্যক্তি পরিবার আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মামলা চলে। পরিবার আদালত খারিজ করে দেয় মামলাটি। এরপরই দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ব্যক্তি। অভিযোগে লেখেন, 'তাঁর স্ত্রী ভীষণই অস্থির প্রকৃতির। কোনও যোগ্য কারণ ছাড়াই অন্তত ছয়বার তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এমনকী মাঝে মধ্যে নিজেকে বিধবা বলে দাবি করেছেন তিনি।' তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাল্টা যুক্তি দেন মহিলার আইনজীবী। সব অভিযোগ উড়িয়ে তিনি দাবি করেন, তাঁর মক্কেলকে শ্বশুরবাড়িতে প্রায়শই অপমানের শিকার হতে হয়েছে। শাশুড়িও দুর্ব্যবহার করতেন তাঁর সঙ্গে।
দুই পক্ষের মতামত শোনার পর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুরেশকুমার কাইত ও বিচারপতি নীনা বনশল কৃষ্ণার ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দেন। বিচারপতিরা বলেন, 'স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ঘন ঘন বাবার বাড়ি কিংবা অন্যত্র চলে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। এই ধরনের আচরণ স্বামীর সঙ্গে নিষ্ঠুরতার সামিল। তাই তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিল আদালত।'
প্রসঙ্গত কিছু দিন আগেই গৃহস্থালির কাজে স্ত্রীর অনিহা এবং বাবা-মা থেকে স্বামীকে আলাদা থাকতে বলা সংক্রান্ত একটি মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সামনে আসে। স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীর গৃহস্থালির কাজের প্রত্যাশা, নিষ্ঠুরতা নয় বলে জানাল উচ্চ আদালত। এরই পাশাপাশি স্বামীকে তাঁর মা-বাবা থেকে আলাদা থাকতে বলা নিষ্ঠুরতার সমান বলে পর্যবেক্ষণে জানানো হয়। বিচারপতি সুরেশ কুমার কাইতের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, বিয়ের উদ্দেশ্য হল ভবিষ্যত জীবনের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া। সেক্ষেত্রে স্ত্রীর থেকে গৃহস্থালির কাজের প্রত্যাশা কখনই অন্যায় নয়। বেঞ্চের মতে, এটা পরিবারের প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা এবং স্নেহ হিসেবে গণ্য করা হয়।