• ফুটবল খেলতে চায় নাবালিকা, বিয়ে ভাঙল কন্যাশ্রীর সৌজন্যে
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪
  • গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর: পায়ে বল নিয়ে ড্রিবল করতে চায় সেই মেয়ে। অথচ পরিবার চেয়েছিল পায়ে বিয়ের বেড়ি পরাতে। তাই স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল। অভিভাবকরা কোনও কথা কানে তুলতে চাননি। এখানেই আরও একবার সুফল মিলল কন্যাশ্রী ক্লাবের। শেষ পর্যন্ত রোখা গিয়েছে ফুটবলের স্বপ্নে ভাসা নাবালিকা সেই কন্যার বিয়ে। শান্তিপুর সূত্রাগড় গার্লস হাইস্কুলের (উচ্চ মাধ্যমিক) ঘটনা।বছর তিনেক ধরে স্কুলের ফুটবল টিমে খেলছে ওই ছাত্রী। গত বছর আড়ংঘাটা সাব ডিভিশনে স্কুল ফুটবলে অংশও নিয়েছিল সে। সুযোগ পেয়েছিল জ়োনালে খেলার। তবে অসুস্থতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। স্ট্রাইকার পজ়িশনে খেলা মেয়েটি গত কয়েক বছর ধরে স্পোর্টসে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। সেই সঙ্গে পড়াশোনা নিয়েও আগ্রহী সে।

    এমন ফুটবল-অন্ত-প্রাণ সতেরো বছরের মেয়ের স্বপ্নকে গুরুত্ব না দিয়ে জোর করে বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। তার আপত্তিকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর কন্যাশ্রী ক্লাবের কাছ থেকে পেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। সঙ্গে সঙ্গে নোডাল টিচার-সহ দু'জনকে নিয়ে তিনি থানায় ছুটে যান। সেখান থেকে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা ওই ছাত্রীর বাড়িতে পৌঁছন।

    ছাত্রীর বাবা-মা ও অন্য আত্মীয়রা প্রথমে বিয়ে ঠিক করার কথা স্বীকারই করতে চাননি। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা বোঝাতে শুরু করেন যে, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া বেআইনি। ক্রমাগত বুঝিয়ে যাওয়ায় কাজ হয়। ছাত্রীর বাবা অবশেষে স্বীকার করেন যে, মেয়ের বিয়ের জন্য আত্মীয়-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করাও শুরু করেছিলেন তিনি।

    সামান্য আশার আলো দেখতে পেয়ে মুখ ফুটে বছর সতেরোর সেই ছাত্রী বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে জানিয়ে দেয়, জোর করে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তার। মোটেই বিয়ে করতে চায় না সে। বরং আরও পড়াশোনা করতে চায়। তার চেয়েও বেশি চায় ফুটবল খেলতে। জানায়, ফুটবল নিয়ে কত স্বপ্ন তার। এই জোরালো দাবি এবার আর ধমক দিয়েও থামাতে পারেননি অভিভাবক।

    তার উপর প্রধান শিক্ষিকার বারবার বোঝানোতে শেষমেষ কাজ হয়। শেষপর্যন্ত, রাতে থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়েছে পরিবার যে, বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না তাঁরা। শান্তিপুর সূত্রাগড় গার্লস হাইস্কুলের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষিকা আইভি প্রামাণিক বলেন, 'কন্যাশ্রী ক্লাব আছে আমাদের স্কুলে। কোনও নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে যাতে না হয়, সে খবর রাখছিল ক্লাবের মেয়েরা।

    সেখান থেকেই খবর পাই, আমাদের স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে আগামী ২২ এপ্রিল। খবরের সত্যতা আছে জানতেই একটুও দেরি করিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে নোডাল টিচার এবং আরেক শিক্ষিকাকে নিয়ে প্রথমে শান্তিপুর থানায় ঘটনা জানাই। তখনই ৪ জন পুলিশকর্মীকে আমাদের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সোজা চলে গিয়েছিলাম ওই ছাত্রীর বাড়িতে।

    ছাত্রীটির বাবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। পরিবার অভাবী। প্রথমে মেয়ের বিয়ে দেওযার কথা স্বীকার করতে চাননি বাবা। কিন্তু পরে আমরা আইনি বিষয়টি বোঝালে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেন। বাড়িতে আমাদের দেখে সাহস পেয়ে ছাত্রীটিও জানায়, এ বিয়েতে তার মত নেই। সে আরও পড়বে এবং স্কুলের ফুটবল দলে আরও ভালো করে খেলবে।' কন্যাশ্রী ক্লাবের সৌজন্যে বিয়ে ভেঙে ফের একবার ফুটবলের স্বপ্নে মশগুল থাকতে পাচ্ছে শান্তিপুরের এক কন্যাশ্রী!
  • Link to this news (এই সময়)