অর্ণব আইচ, নিরুফা খাতুন: শবসাধনা? আর তার জন্যই কি ভাইয়ের স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করে ?তান্ত্রিক? শুদ্ধ নীলাঞ্জন সরখেল? খুনের পর শব বা মহিলার রক্তাক্ত দেহ নিয়ে তন্ত্রসাধনা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। ওয়াটগঞ্জে গৃহবধূ দুর্গা সরখেল খুন ও তার দেহ খন্ডিত করে পাচার করার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। খুনের পর তন্ত্রসাধনা হয়েছিল, সেই প্রমাণ পেল পুলিশ।
দ্বিতীয়বারের জন্য গঙ্গার চটকল ঘাটের কাছ থেকে মহিলার দেহের যে বাকি অংশ উদ্ধার হয়, সেখানেই একটি কালো প্লাস্টিকে পাওয়া যায় ধুনির ছাই ও তন্ত্রসাধনা তথা পুজোর অন্যান্য উপকরণ। যদিও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এখনো হাতের তালু ও পায়ের পাতা বা পায়ের চেটো উদ্ধার হয়নি। দেহের ওই অংশ সে তন্ত্রসাধনার কোন উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করার ছক কষেছিল কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। যদিও নীলাঞ্জন সহজে মুখ খুলছে না বলেই দাবি পুলিশের।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, যখন পুলিশ নীলাঞ্জন কে সাইকেলে করে দেহের অংশ পাচারের সিসিটিভির ফুটেজ দেখায়, তখন সে বলে যে পুজোর উপকরণ ফেলার জন্য সকালে বেরিয়েছিল। তাতে নতুন করে সন্দেহ হয় পুলিশ আধিকারিকদের। সেই সূত্র ধরে চটকল ঘাটের কাছে ঝোপঝাড়ে দেহের অংশ খুঁজে পাওয়ার পর যখন পুলিশ আশপাশে তল্লাশি চালায়, তখনই একটি প্লাস্টিক থেকে উদ্ধার হয় তন্ত্র সাধনার উপকরণ ও ধুনির প্রচুর ছাই। এর ফলে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত যে, নিহত গৃহবধূ দুর্গা সরখেলের গলাকাটা দেহ বা শব সামনে রেখেই ঠাকুর ঘরে বসে তন্ত্রসাধনা করেছিল সে। যেহেতু গলা কাটা হয়েছিল, তাই নরবলির তত্ত্ব সামনে আসতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। এও প্রশ্ন উঠছে, যদি তন্ত্র সাধনার জন্য নরবলি দেওয়া হয় তাহলে দুর্গার স্বামী ফিরে আসার পরই কেন হত্যা করা হল। না কি দুর্গার সঙ্গে কোনও ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল নীলাঞ্জনের। ভাই ফিরে আসায় সেই সম্পর্ক হয়তো সামনে চলে আসত। তাই দুর্গাকে চিরকালের মত সরিয়ে দিতেই খুন করা হয়। কারণ নীলাঞ্জন যে তাঁর নেশাগ্রস্ত ভাই ধরনীধর সরখেলকে রিহ্যাবে পাঠায়িছিল তা দুর্গাকে জানায়নি। স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করলে নীলাঞ্জন বলতো সে যেখানে আছে ভালো আছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি ওই রিহ্যাবে এক আবাসিকের মৃত্যু হয়। তারপরই দুর্গার স্বামী সেখান থেকে পালিয়ে আসে। পালিয়ে প্রথমে শশুরবাড়িতে যান। পরের দিন বাড়িতে গিয়ে নীলাঞ্জনের টাকা চুরি করে ফের শশুরবাডি় চলে আসে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই চুরির টাকা স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে নিজের ছেলের হাত দিয়ে নীলাঞ্জনকে পাঠিয়ে দিয়েছিল দুর্গা। খুনের দিন রাতে দুর্গার ছেলে নীলাঞ্জনের ঘরে ঘুমাতেও যায়।