Royal Bengal Tiger : ১১ বাঘ চেয়ে কাম্বোডিয়ার চিঠি, আপত্তি নেই দিল্লির
এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪
রব উঠেছিল গত বছরের এপ্রিলেই। যখন জানা গিয়েছিল, ২০২২-এর সর্বশেষ বাঘশুমারিতে ভারতে কমপক্ষে ৩,৬৮২টি বাঘ রয়েছে, তখনই বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলেছিলেন, এবার বিদেশেও বাঘ পাঠানোর প্রস্তাব এল বলে! ঘটনাচক্রে গত বছরই কার্যত বাঘশূন্য কম্বোডিয়া ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল, ভারতের কিছু বাঘ উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের জঙ্গলে ছাড়া হোক। এবার চলতি বছরের জানুয়ারিতে কম্বোডিয়ার তরফে মোদী সরকারের কাছে সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে ১১টি বাঘ চাওয়া হয়েছে। আর সেই প্রস্তাবে ইন-প্রিন্সিপল অ্যাপ্রুভালও (নীতিগত অনুমোদন) দিয়েছে ন্যাশনাল টাইগার কানজ়ারভেশন অথরিটি বা এনটিসিএ। তবে সবটাই নির্ভর করছে কম্বোডিয়ার পরিবেশ সেই ট্রান্সলোকেশনের জন্য কতটা উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে, তার ওপর।কম্বোডিয়ার জঙ্গলে থাকা ইন্দো-চাইনিজ় বাঘের ছবি শেষবার ক্যামেরা ট্র্যাপে উঠেছিল ২০০৭ সালে। তার পর আর দেখা না-মেলায় সে দেশের জঙ্গলে বাঘ 'ফাংশনালি এক্সটিঙ্কট' হয়ে গিয়েছে বলে ২০১৬ সালে ঘোষণা করা হয়। এর পিছনে কারণ ছিল মূলত চোরাশিকার এবং উপযুক্ত প্রে বেসের (শিকারযোগ্য জন্তুর) অভাব। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রক সূত্রের খবর, কম্বোডিয়ার আর্জি মেনে কয়েক মাস আগে গ্লোবাল টাইগার ফোরাম, ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং এনটিসিএ-র একটি প্রতিনিধি দল সে দেশের জঙ্গল পরিদর্শন করে এসেছে। সেই দলের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, কম্বোডিয়াকে আগে জঙ্গলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাড়াতে হবে প্রে-বেসও। জঙ্গল বাঘের থাকার উপযুক্ত হলে তবেই কম্বোডিয়ার আর্জি বাস্তবায়নের কাজে নামা হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে ভারতের উদ্যোগে সদ্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট ফোরাম।
কম্বোডিয়া প্রথম ধাপে ১১টি বাঘ চেয়েছে ভারতের কাছে। সেগুলি মুক্ত জঙ্গলে ছাড়ার জন্য, না ঘেরাটোপে রেখে সাফারির জন্য, স্পষ্ট করা হয়নি। কিন্তু তাতেও সমস্যা আছে। কম্বোডিয়ায় ছিল ইন্দো-চাইনিজ় বাঘের প্রজাতি, ভারতে মূলত থাকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। দুই বাঘের জেনেটিক ক্লাস্টার আলাদা। রয়্যাল বেঙ্গলকে তাই কম্বোডিয়ার মুক্ত জঙ্গলে ছাড়া যায় না। ভারতে ইন্দো-চাইনিজ় বাঘের মিশ্র প্রজাতির দেখা মেলে একমাত্র অরুণাচল প্রদেশে। কারণ অরুণাচল ইন্দো-চাইনিজ় বাঘের ওয়েস্টার্ন-মোস্ট ডিস্ট্রিবিউশন এরিয়া এবং বেঙ্গল টাইগারের ইস্টার্ন-মোস্ট ডিস্ট্রিবিউশন এরিয়া। সেখানে দুই প্রজাতির বাঘের জিনগত মিশ্রণ হামেশাই ঘটে। ফলে সেখানকার বাঘের জেনেটিক ক্লাস্টার কম্বোডিয়ার জন্য উপযুক্ত। অথচ ভারতের উত্তর-পূর্বের ওই এলাকায় বাঘের সংখ্যা যথেষ্ট কম। তাই সেখান থেকে বাঘ অন্য দেশে পাঠানো এখনই সম্ভব নয়।
এর বাইরে কম্বোডিয়ায় ঘেরাটোপে টাইগার সাফারির জন্যও বাঘের চাহিদা রয়েছে। এ ব্যাপারেও উৎসাহ প্রকাশ করেছে সাউথ-ইস্ট এশিয়ার ওই দেশ। সেক্ষেত্রে বেঙ্গল টাইগার দিতে সমস্যা নেই। তার জন্য বন মন্ত্রকের নজরে রয়েছে ওয়েস্টার্ন ঘাট অঞ্চল, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কেরালার ওয়েনাড়। কারণ ওয়েনাড়ে টাইগার রিজার্ভ না থাকলেও সেখানকার স্যাংচুয়ারি ও আশপাশের অরক্ষিত এলাকা মিলিয়ে অন্তত ১৫০ বাঘ রয়েছে, যা রীতিমতো 'সারপ্লাস পপুলেশন'। তবে এই নিয়েও এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসেনি ভারত সরকার।