মালদা জেলা একসময় পরিচয় ছিল প্রয়াত প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা এবিএ গণি খান চৌধুরী দুর্গ হিসাবে। তাঁর প্রয়াণের পরও কি মালদার ভোট অঙ্ক ঘোরে গণি খানের নামের আশেপাশেই?এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে।১৯৮০ সালে অবিভক্ত মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জিতে সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী। সেই শুরু, এরপর একটানা আটবার মালদা থেকে সাংসদ হিসেবে অপরাজয়ের থাকার রেকর্ড করেন তিনি। ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর নির্বাচন হয় এই লোকসভা কেন্দ্রে। প্রার্থী হন বরকত সাহেবের ভাই আবু হোসেন খান চৌধুরী ওরফে ‘ডালুবাবু’। তাঁকেও খালি হাতে ফেরায়নি জনতা। অবিভক্ত মালদা এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ মালদা মিলিয়ে একটানা পর পর চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। গণি খান চৌধুরী কয়লামন্ত্রী , রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জেলায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক গতিবিধিও পরিবর্তন হয়েছে।
বরকত গনি খান চৌধুরী আজ নেই। তবে এখনও মালদার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। গণি খানের ম্যাজিক বা তাঁর নামে ভোট হয় বলে মনে করেন বর্তমান কংগ্রেস নেতাকর্মীরা। যদিও এই দাবি অস্বীকার করেছেন বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে রাজ্য যুব কংগ্রেসের সম্পাদক কুণাল ক্রান্তি চৌধুরী বলেন, ' বরকত সাহেব শুধু মালদা উন্নয়নের জন্য কাজ করেননি। তিনি গোটা পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গিয়েছেন, যা আর কেই করতে পারবে না। কলকাতায় মেট্রোরেল চালু করার বিষয়ে বরকত সাহেবের অবদান রয়েছে। বরকত সাহেবের পর তাঁর ভাই ডালুবাবু সেই কাজ করেছেন। মালদার মানুষ আজও তাঁকে মনে রেখেছেন। এই লোকসভা নির্বাচনেও তাঁর প্রভাব দেখা যাবে। মালদা উত্তর এবং দক্ষিণ দুই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীই জয়ী হবেন।'
যদিও এই প্রসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কণ্ঠে শোনা গেল কটাক্ষ। ইংরেজবাজার শহরের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, 'মালদার উন্নয়নে গণিখান চৌধুরী অনেক কাজ করেছেন এই কথা সত্যি। লোকসভা নির্বাচনে তাঁর নাম থাকবে তাও সত্যি। তবে বরকত সাহেবের পর মানুষ এখন ভরসা করেছে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। একসময় বরকত সাহেবের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালো সম্পর্ক ছিল। মালদার মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস বাংলার উন্নয়ন করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ফল দেখা যাবে ভোটবাক্সেও।'
অন্যদিকে, উত্তর মালদার BJP সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, 'গণি খান চৌধুরী অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এটা সত্যি। তবে সেই সময় আর আজকের মধ্যে তথাত অনেক। দেশের যদি প্রকৃত অর্থে কেউ উন্নয়ন করে থাকেন তা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্তমানে কংগ্রেসের এই প্রজন্ম গণি খান চৌধুরীকে সম্মান করে না। গণি খানের নাম করে আজও যদি মানুষের কাছে কংগ্রেস ভোট চায় তাতে লাভ হবে না। কংগ্রেস যে আশা করছে তা ঠিক নয়। কংগ্রেসের নীতি থেকে কংগ্রেস অনেকটাই সরে এসেছে। কংগ্রেস কর্মীরা অনেকেই BJP-তে যোগদান করেছেন।'
ইংরেজবাজার শহরের বাসিন্দা র জয়ন্ত কুন্ডু জানান, 'গণি খান চৌধুরী গোটা বাংলার জন্য বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। গণি খানের মধ্যে আদর্শ ছিল, নীতি ছিল, কাজ করার প্রবণতা ছিল। এখন কোনও রাজনৈতিক নেতার মধ্যে আমি তা দেখতে পাই না। তাই গণি খানের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না।'
এবারে দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কংগ্রেসের ইসা খান চৌধুরী অর্থাৎ ডালুবাবুল ছেলে। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার জ্যেঠু যে কাজ করেছেন তা সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'