Money Fraud : কালীঘাটে জমি-মামলার মধ্যে ১৭ লক্ষ প্রতারণার জালে বৃদ্ধা
এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪
অমিত চক্রবর্তী
কালীঘাটে পারিবারিক জমি নিয়ে মামলা-মকদ্দমার মধ্যেই একের পর এক প্রতারণার জালে ফেঁসে বিধ্বস্ত অশীতিপর বৃদ্ধা। এক দিকে, জমি নিয়ে মামলা চলছে কালীঘাটের বাসিন্দা রাজ্যের এক প্রভাবশালী পরিবারের সঙ্গে। অন্য দিকে, সেই জমি নিয়ে সুরাহার টোপে কখনও প্রতারকরা হাজির হয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়ের পরিচয়ে, আবার কখনও এলাকার প্রভাবশালী হিসেবে। প্রতারক-তালিকায় রয়েছেন এমনকী কলকাতা পুলিশের অফিসারও!১৭ লক্ষ টাকার বেশি খুইয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝে টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বৃদ্ধা। কিন্তু সেখানেও রক্ষা হয়নি। হাইকোর্টের জাল নথি দেখিয়ে প্রতারণার ছক ছিলই, এ বার অভিযোগ, তদন্তকারী অফিসার চার্জশিট জমা পড়েছে বলে জাল নথিতে সরকারি স্ট্যাম্প মেরে বিভ্রান্ত করেছেন বৃদ্ধাকে। এত দিক থেকে প্রতারকরা তাঁকে ঘিরে ধরায় পিছনে বড় ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন তাঁর আইনজীবীরা। বৃদ্ধা দ্বারস্থ হয়েছেন হাইকোর্টের। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ আগামী সোমবার তদন্তকারী অফিসারকে মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্বামী ছিলেন আমেরিকাবাসী প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। ছোট মেয়েও বাবার পেশায় যুক্ত। বড় মেয়ে আইনজীবী। বর্তমানে থাকেন আমেরিকায়। কালীঘাটে পরিবারের প্রায় আট কাঠা জমি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন গৌরী রায়। প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই বয়সে একের পর এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তাঁর হেনস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে শুক্রবার আইনজীবীরাও খানিক অসহায়তাই প্রকাশ করেন হাইকোর্টে। কালীঘাটের জমি নিয়ে প্রভাবশালী এক পরিবারের সঙ্গে গৌরীর মামলা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
এরই মধ্যে কৌস্তুভ সাহানা এবং দীপ্তি সাহানা নামে দু’জন উপযাচক হয়ে এসে অন্য দু’জনকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করায়। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীকে এনে হাইকোর্টে মামলা করে তাঁর পক্ষে রায় এনে ওই জমি বিক্রি করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় তারা। সে জন্যে বৃদ্ধার থেকে কয়েক দফায় কয়েক লক্ষ টাকা নেয় তারা।
নিজেদের আশ্বাস বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির নামে জাল রায়ের কপিও তৈরি করে ওই প্রতারকরা। বৃদ্ধা অবশেষে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার। তার আগেই অবশ্য গলে গিয়েছে ১৭ লক্ষ টাকা! তার পরেই ২০২২-এর নভেম্বরে তিনি টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। হাইকোর্টে মামলায় বৃদ্ধার আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী ও ব্রততী প্রামাণিকের অভিযোগ, ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার তদন্তের নামে বৃদ্ধার কাছে বেশ কয়েক বার যান। আশ্বাস দেন সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার।
বিশ্বাস অর্জন করতে গত ১৭ অগস্ট তারিখের একটি চার্জশিটের প্রথম পাতা (তাতে টালিগঞ্জ থানার আসল সিল) দিয়ে জানান, বৃদ্ধার পক্ষেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পরে সেই নথি দেখে বোঝা যায়, জাল কাগজে আসল সিল-ছাপ মেরে তাঁকে প্রতারণা করা হয়েছে। গৌরীর আইনজীবীদের আশঙ্কা, ওই জমি ঘিরে ষড়যন্ত্রের গভীর জাল বোনা হয়েছে। হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করায় এ বার কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোনোর সম্ভাবনা দেখছেন আইনজীবীরা।