স্বামীর মৃত্যু মানেই সব অধিকার, সুবিধা শুরু স্ত্রীর নয়, মায়েরও প্রাপ্য থাকে: হাইকোর্ট
এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪
কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল ছেলের। এরপর নিয়ম মোতাবেক সরকারি কর্মীর স্ত্রী চাকরি পান। শাশুড়িকে দেখভালের শর্তও মেনে নেন। চাকরির পাশাপাশি নিচ্ছিলেন স্বামীর পেনশনও। এদিকে চাকরি পেয়েই ওই মহিলা চলে যান বাপের বাড়ি এবং দ্বিতীয় বিয়েও করেন। এদিকে বউমার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে আদালতের দরজায় কড়া নাড়েন প্রবীণা। আর সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এবার উল্লেখযোগ্য নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মামলাটির প্রেক্ষিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দিয়েছেন, স্বামীর মৃত্য়ু মানেই সমস্ত অধিকার বা সুবিধা কেবলমাত্র স্ত্রী পেতে পারেন না। তাতে প্রাপ্য রয়েছে মায়েরও।পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন বজ্রদুলাল মণ্ডল। তিনি ২০১৪ সালে কর্মরত অবস্থাতে বজ্রাঘাতে মারা যান। তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা পাত্র মণ্ডলকে এরপর নিয়ম মোতাবেক গ্রুপ-সি কর্মীর চাকরি দেওয়া হয়। সেই সময় তিনি মেনে নিয়েছিলেন যে শাশুড়ি মাকে তিনি আর্থিকভাবে দেখাশোনা করবেন। কিন্তু, এরপর বজ্রদুলালের মা বউমার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দরজায় কড়া নাড়েন।
তাঁর অভিযোগ ছিল, চাকরি পাওয়ার পরেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যান বউমা। সেখানে গিয়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর শাশুড়ির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি স্বামীর মৃত্যুর পর পেনশনও পাচ্ছিলেন তিনি। ওই প্রবীণার আইনজীবী এই পুরো বিষয়টি বেআইনি বলে আদালতকে জানায়।
এরই প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর চাকরি এবং পেনশন দুই ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র স্ত্রীর অধিকার থাকতে পারে না। মায়েরও প্রাপ্য রয়েছে। মৃত ব্যক্তির মাকেই প্রাপ্য পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। ২০১৫ সালের পুরনো নির্দেশ বদল করে পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অধিকর্তা এবং গ্রুপ ইনস্যুরেন্স সংস্থাকে ওই প্রয়াত শিক্ষকের মাকে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শুধু তাই নয়, যাবতীয় নির্দেশ আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয় আদালতের তরফে। এই নির্দেশের ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিতে ওই প্রবীণা। একদিকে ছেলের মৃত্যু, অন্যদিকে আর্থিক সংকট-দুই বিষয়েই জেরবার হয়ে ছিলেন তিনি। শেষমেশ আইনি লড়াই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্ট পেনশন সংক্রান্ত এই নির্দেশ দেওয়ায় আর্থিক বিষয় নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে তিনি।