ফিল্মি প্রেম এখন অতীত… জেন জি় মজে Mundane Dating-এ
এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
সৌমী দত্তবলিউডি স্টাইলে প্রোপোজ বা সিনেম্যাটিক একটা ফ্যান্সি ডেট—জীবনে প্রেম এলে এমন প্রত্যাশা তো ন্যাচারাল। কিন্তু সত্যিই কি তাই? যদি কেউ বলে, এসব এখন ব্যাকডেটেড। ফিল্মি ডেটিংয়ের গপ্পো এখন আর মোটেই চলবে না! শুনতে একটু ধাক্কা তো লাগবেই। কারণ প্রেমের আবার যুগ, প্রজন্ম, বয়স হয় নাকি? প্রেম তো চিরন্তন, তাতে পাগলামি না থাকলে চলে?
কিন্তু নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে জেনারেশন জি় এখন পাগলামির প্রেমে মজতে নারাজ। বরং তাঁদের অধিকাংশই এখন মজে ‘Mundane Dating’-এ! অর্থাৎ, দৈনন্দিন জীবনের নিত্যকার পথ চলাতেই ডেটিং-সেটিং ডান। অনলাইন ডেটিং অ্যাপ বাম্বলের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অন্তত তাই বলছে। ভারতের অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বাম্বলের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৮২ শতাং শ তরুণী এবং ৭৭ শতাং শ তরুণ ‘মানডেন ডেটিং’কেই বেছে নিচ্ছেন স্বপ্নের ফ্যান্সি ডেটিং ছেড়ে।
‘মানডেন ডেটিং’ অর্থাৎ একেবারেই আটপৌরে জীবনের মধ্যে প্রেমের সময় খুঁজে নেওয়া। সেক্ষেত্রে পার্টনারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে কোনও ফ্যান্সি, দামী রেস্তরাঁ, হোটেল বা ডেস্টিনেশনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একসঙ্গে শপিং বা টুকিটাকি দরকারের কেনাকাটি, একসঙ্গে মর্নিং বা ইভনিং ওয়াক, একই ক্যাবে বা বাস-মেট্রোয় একসঙ্গে অফিস যাওয়া, ফিরতি পথে অটোর লাইনে একে অন্যের জন্য অপেক্ষা, গরমের দিনে একটা আইসক্রিম খেতে খেতে কিছুটা পথ হেঁটে আসা অথবা একে অন্যের ঘর গুছিয়ে দেওয়া, ঘেঁটে থাকা আলমারি পরিপাটি করতে একটু সাহায্য— একসঙ্গে এই নিত্যযাপনই তরুণ প্রজন্মের অধিকাং শের কাছে ভালোলাগার ডেটিং।
কিন্তু কেন? প্রেমের জন্য বিশেষ কোনও সারপ্রাইজ় বা অতি নাটকীয়তা থাকবে না? সদ্য চাকরি পাওয়া মধুমিতা ভৌমিক পাঁচ বছর ধরে একটি সম্পর্কে রয়েছেন। মধুমিতার কথায়, ‘ফ্যান্সি ডেটিং মানে কেমন যেন একটা আর্টিফিশিয়াল ব্যাপার। সুন্দর পোশাক, মেক-আপে সেজে সুন্দর সুন্দর কথা বলা— সেখানে তো আমরা পরস্পরের প্রতি অতিরিক্ত ভালো ব্যবহার, প্রেমে গদগদ ব্যাপারটা দেখাবই, কিন্তু তাতে কি আসল মানুষ চেনা যায়? তার চেয়ে প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত, মাথা গরম আমি-র মধ্যেও যে প্রেম খুঁজে নিতে পারবে, সে-ই আমার মনের মানুষ। নিজের অগোছালো ঘর দেখে যখন মাথা গরম, তখন আমার মেজাজকে ঠান্ডা করে পার্টনার যদি একটু ঘর গুছিয়ে দেয়, সেটাই তো ভালোবাসা। যেটুকু টাইম একসঙ্গে কাটাচ্ছি, ভদ্রতা-নাটকীয়তার মুখোশ খুলে আসল মানুষটাকে পরস্পরের কাছে তুলে ধরছি, আমার কাছে সেটাই আসল ডেটিং ।’
বাম্বল-এর সমীক্ষাতেও কিন্তু মধুমিতার কথারই প্রতিফলন। ৩৭ শতাংশ ভারতীয় তরুণ-তরুণী মনে করেন, মানডেন ডেটিং য়েই পরস্পরকে ভালো চেনা যায়, ফ্যান্সি ডেটিংয়ে নয়। ৩৬ শতাংশ ভারতীয় মনে করেন, মানডেন ডেটিংয়ের সাধারণ, কেজো কথাবার্তাই বন্ডিংটাকে স্ট্রং করে, ফ্যান্সি ডেটিংয়ের মনভোলানো প্রেমের কথা বিয়ের পরেই ধাঁ! আর ৪৩ শতাংশ ভারতীয়ের মতে, ব্যস্ততার জীবনে যে আমার জীবনের খুঁটিনাটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে, তার সঙ্গেই বাঁধব ঘর।
যুক্তিটাতে খুব একটা ভুল দেখছেন না মনোবিদ চিত্রাঙ্কনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘অনলাইনের যুগে ছেলেমেয়েদের মেলামেশার পরিধি এখন বেড়েছে, কমেছে প্রেমে পড়ার বয়সও। বহু সম্পর্ক ঝড়ের গতিতে গড়ছে, আবার ভাঙছেও। প্রথম প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা সাধারণত ফ্যান্সি ডেটিংটাই পছন্দ করে, কিন্তু ক্যাজুয়াল সম্পর্কের পর্ব পার করে তারা যখন সত্যিকারের প্রেম খোঁজে তখন কম্প্যানিয়নশিপটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন Mundane ডেটিংয়ের মাধ্যমেই ছেলেমেয়েরা বুঝে নিতে চায় তার পার্টনার কতটা কম্প্যাটিব্ল, দীর্ঘকালে তাদের পথচলা টিকবে কি না।’
তবে সব কিছুরই একটা ভালো আর একটা খারাপ দিক রয়েছে বলে মনে করেন নবীন প্রজন্মের ‘GENERATION আমি’ খ্যাত তরুণ অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, নবীন প্রজন্মের ডেটিং নিয়ে এই মনবদল আদতে সমাজই তৈরি করে দিয়েছে। ঋতব্রতের কথায়, ‘এখন আমাদের বন্ধুবান্ধবদেরও দেখি, সকলে খুব ব্যস্ত। করোনার সময় থেকে পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফের সীমারেখাটা অনেকটাই মুছে গিয়েছে। ফলে শুধু প্রেম নয়, আমাদের সকলের ব্যক্তিগত সময়টাই কমে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে তাই Mundane dating -এর পথে হাঁটছে। কারণ অর্গানাইজ়ড ডেটে যাওয়ার মতো সময় বা সুযোগ হয়তো দু’জনের কেউই করে উঠতে পারছেন না। তবে এর একটা ভালো দিকও রয়েছে। Mundane ডেটিংয়ে প্রেমের উদ্যাপনের চেয়েও একসঙ্গে যাপনটা অনেক বেশি। সেটা ভবিষ্যতের পথ চলাটাকে সহজ করে দেয়। একটা-দু’টো ফ্যান্সি ডেটিংয়ে পার্টনারকে পারফেক্ট মনে হলেও পরবর্তীকালে অনেক কাপ্লই একসঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না, এমন অনেক ঘটনাই দেখেছি। সেক্ষেত্রে বলব Mundane ডেটিং বেটার চয়েস।’
তা বলে কি প্রেমে পাগলামি থাকবে না? মিষ্টি হেসে ঋতব্রতের জবাব, ‘আমার কাছে কিন্তু প্রেম মানে একটু Excess কিছুই…প্রেমে পাগল না হলে চলে! প্রেমের যাপন চলতে থাকুক, কিন্তু উদ্যাপন যেন হারিয়ে না যায়…’