• মমতার দেওয়াল লিখনের স্মৃতিতে বুঁদ খিদিরপুর
    বর্তমান | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
  • অর্ক দে, কলকাতা: মনে হয়, এই তো সেই দিনের কথা। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৪০ বছর। কিন্তু আজও তাজা সেই স্মৃতি টাটকা...! ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। যাদবপুর কেন্দ্রে হেভিওয়েট সিপিএম প্রার্থী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন এক যুব কংগ্রেস নেত্রী। জেদি, লড়াকু। পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করছেন। রান্না ঘরে ঢুকেও গল্প জুড়ে দিচ্ছেন মা-বোনেদের সঙ্গে। খিদিরপুরের একদল তরুণ কালী সাহা, প্রতাপ গঙ্গোপাধ্যায়, রতীশ, সরল গুহ, দিগম্বর বাবলুও ভোটের কাজে ব্যস্ত। কংগ্রেসের হয়ে চলছে মিটিং-মিছিল, দেওয়াল লিখন। সেরকমই  একদিন প্রচারের ফাঁকে তাঁদের সঙ্গেই দেওয়াল লিখনে হাত মেলালেন প্রার্থী নিজেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেদিনের আত্মবিশ্বাসের কথা ভাবলে আজও লোম খাড়া হয় রতীশ, কালীদের। 

    দেওয়াল লিখনের নানা ইতিহাস-গল্প আজও তাঁদের স্মৃতিতে টাটকা। রতীশ, কালী, সরলদের আরও এক সতীর্থ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এখন তিনি রাজ্যের কৃষি ও পরিষদীয় মন্ত্রী। ফেলে আসা সময়ের নানা গল্প তাঁর আজও ঠোঁটস্থ। আরও পিছনের দিকে চলে যাওয়া যাক। তখন নকশাল আমল চলছে। যুব কংগ্রেস কর্মীদের আইডল তখন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। একটা স্লোগান দিয়েছিলেন তিনি, ‘মাও-মার্কস-লেলিন পড়ুন, কিন্তু তার আগে গান্ধী-নেহরু-সুভাষকে জানুন’। ভোটের মুখে কোনও এক রাতে পিজি হাসপাতালের কাছেই একটি দেওয়ালে সেই স্লোগান লিখছেন দুই তরুণ। একজন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং অপরজন মদন মিত্রের দাদা গোবিন্দ মিত্র। ‘প্রথম লাইনটি সবে লেখা হয়েছে। দ্বিতীয় লাইনটি লিখতে যাচ্ছি। এমন সময় পুলিস এসে বন্দুক ঠেকাল।’ ততক্ষণে ভয়ে তাঁদের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া! শেষমেশ অনেক বুঝিয়ে পরের লাইনটি লিখে তারপর নিস্তার পেলেন দু’জন। 

    সময় বদলেছে। বদলেছে দেওয়াল লিখনের ধরন। প্রথমদিকে কিছুটা রেড অক্সাইড কিংবা রবিন ব্লু মেশানো ভাতের মার। আর কয়েকটা হগ ব্রাশ। সরঞ্জাম নিয়েই নেমে পড়ত পাড়ার ছেলে-ছোকরারা। খিদিরপুরের বাসিন্দা প্রতাপ, সরল গুহরা বলছেন, ‘তখন রঙের সঙ্গে মেশানো হতো শিরিষের আঠা। বৃষ্টিতে যাতে রং ধুয়ে না যায়’। খিদিরপুরের রামকমল স্ট্রিটে বড় বাড়ি ছিল সেই সময় কংগ্রেস রাজনীতির ‘ভরকেন্দ্র’। পার্টির যাবতীয় কাজ হতো সেখানেই। উল্টোদিকেই দীপালি কেবিনের চপ কিনে চলত খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা। রতীশ, কালীবাবুরা বলছেন, ‘তখন চুরাশির ভোট চলছে। খিদিরপুর ছিল কবিতীর্থ বিধানসভা। যাদবপুর লোকসভার অংশ। রাত ১০টা বেজে গিয়েছে। ২৫ পল্লির কাছে গোপাল ঘোষ লেনে চলছে দেওয়াল লিখনের কাজ। পাড়ার কারও একটা বাড়িতে বৈঠক সেরে ওই পথ ধরেই ফিরছিলেন শোভনদেববাবু। তাঁর সঙ্গে তিনি এলেন। তখন কতই আর বয়স! কিন্তু আত্মবিশ্বাস চোখে মুখে। আমাদের হাত থেকে ব্রাশ নিয়ে নিজেই দেওয়ালে রং চড়ালেন প্রার্থী! পোড়খাওয়া সোমনাথবাবুকে সেবার হারিয়ে দিয়েছিলেন, সেই মমতাই আজ মুখ্যমন্ত্রী।’ 

    দেওয়াল লিখনে পরবর্তীকালে কার্টুন আঁকার ট্রেন্ড চালু করেন অধুনা কৃষিমন্ত্রী। আজও শোভনদেববাবু ভোটে দেওয়াল লেখেন। সময় বদলেছে। এখন পার্টি কর্মীদের থেকেও বেশি দেওয়াল লেখেন পেশাদার শিল্পীরা। দিনে দু’থেকে তিন হাজার টাকার চুক্তিতে। ভোট আসে, ভোট যায়! খিদিরপুরের রামকমল স্ট্রিট, গোপাল ঘোষ লেনের আড্ডায় আজও স্মৃতিতে ডুব দেন বৃদ্ধ কালী, প্রতাপ, রতীশ, সরলরা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)