• Lok Sabha Election 2024 : ১০৬ বছরের রামজিৎ এখনও চান বুথে গিয়ে ভোটটা দিতে
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায় : বেলেঘাটার মুন্সিবাজার রোডে ঝুপড়ির দোকানের দুয়ারে ফুটপাথে গোটাকতক বস্তা বিছিয়ে বসেছিলেন রামজিৎ সাহু। ভোটার তালিকায় তাঁর বয়স ১০৬। যদিও পরিবারের লোকেদের মতে রামজিতের বয়স অন্তত ১১৪। বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার। বিহারের ছাপড়া থেকে ১৯১৮-য় দাদার হাত ধরে কলকাতায় আসা। সেই থেকে তিনি এই শহরের মানুষ। আগে থাকতেন মতিঝিলে।সেখান থেকে পরিবার নিয়ে মুন্সিবাজারে এসে ওয়াকফ সম্পত্তিতে ভাড়া নেন দু’কামরার ঘর। শুরু করেন গম ভাঙানোর চাকির ব্যবসা। তা-ও অনেক বছর আগে। এখন সেই ব্যবসা বন্ধ। ছেলে ছাতু, চানা, চিঁড়ের ব্যবসা করেন সেখানে। এই ভোটেও রামজিৎ বেলেঘাটা সেলট্যাক্সের বুথে গিয়ে প্রথম ভোটটা দিতে চান। যদিও নির্বাচন কমিশনের লোকজন এসেছিল তাঁর বাড়িতে বসেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। রাজি হননি এই প্রবীণ।

    তাঁর কথায়, ‘প্রতি ভোটেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে হেঁটে বুথে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথম ভোটটা দিই। এটাই আমার আনন্দ। এই ভোটে তার অন্যথা হবে কেন। হোক না বয়স। আমি তো এখনও হাঁটতে-চলতে পারি।’ গান্ধীজিকে সামনে থেকে দেখেছেন। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার দিন গান্ধীজি বেলেঘাটার হায়দরি মঞ্জিলে (বর্তমানে গান্ধী ভবন) ছিলেন। তারপর কলকাতায় দাঙ্গা হলো। রামজিতের সেই স্মৃতি আজও টাটকা।

    জড়ানো হিন্দিতে বলছিলেন সেই স্মৃতিকথা, ‘খুব কাছ থেকে দেখেছি গান্ধীজিকে। গোলমালের সময়ে গাড়িতে করে একদিন গান্ধীজি জয়হিন্দ বাজারের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সোহরাওয়ার্দী।’ কথাগুলি বলতে বলতে মুখের আদলটাই বদলে গেল শতায়ু প্রবীণের। সেই কবে স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে মারা গিয়েছেন। রয়েছেন ছেলে বীরবল আর নাতিরা। তবে ছাপড়ার সঙ্গে যোগসূত্র ছিন্ন হয়নি।

    শহরে তাঁর প্রিয় জায়গা কালীঘাট। কতবার যে খালি পায়ে হেঁটে মন্দিরে গিয়েছেন, ঠিক নেই। তাঁর আক্ষেপ, শহরের মানুষগুলো ইদানীং কেমন যেন হয়ে যাচ্ছেন। সব বদলে যাচ্ছে। রামজিৎ একা নন, ভবানীপুর বিধানসভার লি রোডের আভিজাত মহল্লায় পা রাখলেই দেখা মিলবে ১০২ বছরের রোশন সেভাক বুর্গের। এই পার্সি প্রবীণা একাই থাকেন আবাসনে। তাঁর একমাত্র ছেলে থাকেন লন্ডনে।

    বছরে একবার আসেন। এখানে মায়ের দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন পরিবারিক এক বন্ধু ও পার্সি সমাজকে। রাতদিন সঙ্গে থাকেন ডলি নাম এক মহিলা। ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করতে পারলেও স্মৃতিশক্তি ফিকে হয়েছে। পুরোনো কথা মনে করতে পারেন না। কলকাতা বন্দর বিধানসভার রামনগর লেনে বসবাস ১০৮ বছরের প্রবীণ বজরং দাসবাংলা ও ১০০ বছরের বয়স্ক মেহেদি হাসানের।

    কলকাতাই শুধু নয়, কোচবিহারের শীতলখুচির বড়কৈমারি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ১১৪ বছরের কুমুদিনী বর্মন, ঝাড়গ্রাম কামলাসোলের ১১২ বছরের কল্পনা সিংহ, সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ১১৪ বছরের হাজারিদেবীর মতো একাধিক শতায়ু মুখ ভোট দেবেন এই লোকসভায়।নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, রাজ্যে এখন শতায়ু ভোটার রয়েছেন ৩,৫৯৬ জন। সারা দেশে এই সংখ্যাটা ২ লক্ষ ১৮ হাজার।

    এঁরা সকলেই দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ভোটার ছিলেন। প্রত্যেকেই দেশের স্বাধীনতার সাক্ষী। স্বাধীনতার বীর যোদ্ধাদের কাছ থেকে দেখেছেন। স্বাধীনতার পরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা সামনে থেকে দেখেছেন। এখন এই প্রবীণরা সকলেই যে সচল, এমন নয়। অনেকেই বয়সের ভারে হাঁটা-চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। ফিকে হয়েছে স্মৃতি। অনেকেই বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না।

    তাই তাঁদের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও ভোট দেওয়ার সুযোগ হয় না। নির্বাচন কমিশন এই প্রবীণদের বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কমিশন জানিয়েছে, ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভোটাররা বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারবেন। এর জন্য ফর্ম ২০ পূরণ করতে হবে। এর জন্য নীচুতলার ভোটের কাজে যুক্ত বিএলআরও থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই কমিশনের উদ্যোগে এই মুখগুলোও এই ভোটে কতটা অংশ নিতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।
  • Link to this news (এই সময়)