• ভূপতিনগর নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধে মোদী-মমতা, সন্ত্রাসের লাইসেন্সের পাল্টা গ্যারান্টি-খোঁচা
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: একজন ছিলেন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। অন্যজন রাঢ়বঙ্গের পুরুলিয়ায়। তবে রবিবার দু’জনেরই নজর ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। ভোটের মরশুমে রাজ্য রাজনীতি সরগরম ভূপতিনগর ইস্যুকে কেন্দ্র করে। শনিবার কাকভোরে সেখানে এনআইএ আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।যা নিয়ে জোর তরজা শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধীর মধ্যে। দু’পক্ষই চাইছে ভূপতিনগরকে সামনে রেখে ভোটের আগে রাজনৈতিক ‘অ্যাডভান্টেজ’ নিতে। রবিবার ভূপতিনগরের ঘটনায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং বঙ্গ-বিজেপির হয়ে ব্যাট হাতে নামেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন জলপাইগুড়ির নির্বাচনী সভা থেকে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের উপর হামলার ঘটনায় তৃণমলকেই দায়ী করেছেন।

    তবে সরাসরি ভূপতিনগরের নাম মোদী উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবারই বিজেপির বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। তোপ দেগেছিলেন এনআইএ-র বিরুদ্ধে। রবিবার পুরুলিয়ার নির্বাচনী জনসভা থেকে ফের ভূপতিনগর প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন তিনি।

    মমতার অভিযোগ, যাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের বাড়িতেই এনআইএ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়ের সমর্থনে এদিন ধূপগুড়ির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তৃণমূল চায়, ওদের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সন্ত্রাস চালানোর লাইসেন্স দিতে। তাই কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা যখন কোনও অভিযানে যায়, তখন তৃণমূল ওদের উপর হামলা করে। অথবা অন্যদের দিয়ে হামলা করায়।’

    মোদীর কটাক্ষ, ‘তৃণমূল আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনকারী রাজনৈতিক দল।’ এদিনই পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের লধুড়কায় তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর সমর্থনে নির্বাচনী সভায় হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনিও ভূপতিনগরের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, ‘গদ্দারের এলাকায় মানুষ যখন প্রতিবাদ করছে, তখনই এনআইএ ঢুকিয়ে দিচ্ছে! মধ্যরাতে মহিলারা বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল। পুলিশকে না জানিয়ে ওরা চলে গেল। পুলিশের ড্রেস পরে আগে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামেও তো বদমাইশি হয়েছে। মায়েরা কী করে বুঝবে? বাইরে থেকে যদি কেউ হামলা করতে আসে?’

    মমতার দাবি, সেই অজানা আশঙ্কা থেকেই ভূপতিনগরের মহিলারা প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর সংযোজন, ‘যে মহিলারা প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ডায়েরি করে দিয়েছে! বলছে, তৃণমূলের সব বুথ এজেন্টদের অ্যারেস্ট করো। সব প্রার্থীকে অ্যারেস্ট করো।’

    মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, ‘রামনবমী আসছে। একটা চকোলেট বোম পড়লেও দেখবেন এনআইএ চলে আসছে। ১৯ তারিখ ভোট। ১৭ তারিখ দাঙ্গা করবে ওরা। তোমাদের রাম তো কানে কানে বলে দিয়ে যায়নি, দাঙ্গা করো। কিন্তু এরা দাঙ্গা করবে আর দাঙ্গা করে এনআইএ ঢুকিয়ে দেবে।’ এ বিষয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

    গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে অভিযান চালাতে গিয়ে একইরকমভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছিল আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র অফিসারদের। প্রধানমন্ত্রী এদিন সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘সন্দেশখালিতে কী হয়েছিল? এটা পুরো দেশ জেনে গিয়েছে, মা-বোনেদের উপর কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে এখানে সব ইস্যুতে বাধ্য হয়ে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।’

    এরপরই তিনি ধূপগুড়ির সভায় হাজির বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘এখানে সব জায়গায় তৃণমূলের সিন্ডিকেটরাজ চলছে। সন্দেশখালির অপরাধীদের গোটা জীবন জেলে থাকা উচিত কি না? রেশন দুর্নীতি, শিক্ষক দুর্নীতির অভিযুক্তদের শাস্তি পাওয়া উচিত কি না?’ সভা থেকেই প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, একজন দোষীও রেহাই পাবে না।

    তিনি বলেন, ‘আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, ৪ জুনের (ওইদিন লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা হবে) পর দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে তদন্তে আরও গতি আসবে। মোদী গ্যারান্টি দেয়, ওরা গালাগালি দেয়।’ ক’দিন আগেই কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে ফোন করে ইডির বাজেয়াপ্ত করা তিন হাজার কোটি টাকা গরিব মানুষদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

    এদিন ধূপগুড়ির প্রকাশ্য সভা থেকেই মোদী আরও একবার ইডির বাজেয়াপ্ত টাকা ফেরত দেওয়া সংক্রান্ত গ্যারান্টি দিয়েছেন। অন্যদিকে, এদিনই পুরুলিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর ‘গ্যারান্টি’কে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘আপনার গ্যারান্টি মানে তো নোটবন্দির গ্যারান্টি। আপনার গ্যারান্টি মানে তো সিবিআই। আপনার গ্যারান্টি মানে তো এনআইএ। আপনার গ্যারান্টি মানে তো ইনকাম ট্যাক্স।’

    তাঁর আক্রমণ, ‘দেশের সব নেতাকে গ্রেপ্তার করছে। সব কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। কোনও দিন ভারতে এই পরিস্থিতি আপনারা দেখেছেন? একটা স্বৈরাচারী, দানবীয়, অশুভ, অত্যাচারী সরকার!’
  • Link to this news (এই সময়)