• Sandeshkhali Case : সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্য সরকারকে সমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
  • রূপসা রায় : সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্য সরকারকে সমন পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তবে এই সমন মহিলাদের উপর অত্যাচার, তোলাবাজি, জমি জখল— এই ধরনের অপরাধ কিংবা আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে নয়। সন্দেশখালির বাসিন্দা, অন্যত্র কাজে গিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের কল্যাণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও রাজ্যের শ্রম কমিশনারকে এই সমন এনআইচআরসি পাঠিয়েছে।সিলিকোসিস-আক্রান্ত শ্রমিকদের এখনও কেন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়নি, সংশ্লিষ্ট সিএমওএইচ ও সিলিকোসিস ডায়াগনসিস বোর্ডের আধিকারিকরা কেন রোগাক্রান্ত শ্রমিকদের এক্স-রে রিপোর্ট নেননি — এই সব প্রশ্ন তুলে মুখ্যসচিব ও শ্রম কমিশনারকে গত শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ওই সমন পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ মে দিল্লিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অফিসে তাঁদের হাজিরা দিতে হবে।

    সিলিকোসিস ফুসফুসের রোগ, তবে পেশাগত রোগ। রাজ্যের যুগ্ম শ্রম কমিশনার বিক্রম মহলানবীশের বক্তব্য, ‘এটা অনেক পুরোনো কেস। এই সমনের ব্যাপারে এখনও জানি না।’ সন্দেশখালি-২ নম্বর ব্লকের ঝুপখালি, বেড়মজুর ও জেলিয়াখালি গ্রামের বেশ কয়েক জন শ্রমিক ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ সালে গিয়েছিলেন আসানসোলের জামুড়িয়ার একটি কারখানায় কাজ করতে।

    তাঁদের দাবি, কারখানার নাম ছিল ‘তারা মা মিনারেল্‌স’। বেশ কিছু দিন ওখানে কাজ করেন তাঁরা। ২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আয়ালার পর তাঁরা পর্যায়ক্রমে গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। তার পরেই ধীরে ধীরে তাঁদের বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর শুরু হয় এবং কমতে থাকে ওজন। এনএইচআরসি-তে পাঠানো তথ্য বলছে, ওই শ্রমিকদের অন্তত ৯ জন মারা যান।

    অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে সুবর্ণ মণ্ডল প্রবল শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর নিয়ে মারা গেলেও এসএসকেএম হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয় ‘লিভার সিরোসিস’, যদিও তাঁর প্রেসক্রিপশনে সিলিকোসিসের উল্লেখ রয়েছে।

    সন্দেশখালির বিভিন্ন গ্রাম থেকে যাওয়া ওই শ্রমিকদের কাজের ইতিহাস খতিয়ে দেখে ‘অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেল্‌থ অ্যাসোসিয়েশন অফ ঝাড়খণ্ড’ (ওশাঝ) এই অনুমান করে যে, জামুড়িয়ার ওই কারখানায় কাজ করতে গিয়ে সিলিকা ধূলিকণার সঙ্গে সংযোগের ফলেই তাঁরা সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।

    জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মতো, সরকারের পুনর্বাসন নীতি অনুযায়ী, সিলিকোসিসে মৃত শ্রমিকের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ও সিলিকোসিস-আক্রান্ত, জীবিত শ্রমিককে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের।

    সিলিকোসিসে আক্রান্ত, সন্দেশখালির হারা পাইক বলেন, ‘আমরা দেড়শো টাকা দৈনিক মজুরির কাজের লোভে ওখানে গিয়েছিলাম। ১২ ঘণ্টার উপর খাটতে হতো। ঘুমোতাম ওই কারখানার কাছে এক জায়গায়।’ ঝুপখালি গ্রামের অময় সর্দারের কথায়, ‘আমাদের কাজ ছিল কোয়ার্টজাইট পাথরের বল মিল-এ দিয়ে মিহি পাউডার তৈরি করা ও ক্রাশার মেশিন দিয়ে সুজি বা চিনির মতো দানা তৈরি করা।’

    অময়ের বর্ণনায়, ‘পাথর গুঁড়ো করার সময়ে আধ হাত দূর থেকেও কিছু দেখা যেত না, এত ধুলো উড়ত। সারা গায়ে ধুলোর পলেস্তরা পড়ে যেত।’ পরে জানা গিয়েছে, ‘তারা মা মিনারেল্‌স’ নামে কোনও কারখানা ‘ফ্যাক্টরিস অ্যাক্ট ১৯৪৮’-এর আওতায় নথিভুক্ত নয়।

    ওশাঝের কর্ণধার শমিতকুমার কর বলছেন, ‘পশ্চিম বর্ধমানে তারা মা সিলিকন নামে একটি সংস্থার খোঁজ পেয়েছি, যেটি ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট-এ নথিভুক্ত। ওটাই তারা মা মিনারেল্‌স কি না, সেটা নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছি।’
  • Link to this news (এই সময়)