কেন পকসো কেসে ভিক্টিমের নাম উল্লেখ, অসন্তোষ সুপ্রিম কোর্টের
এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: মাস আটেক আগে একটি পকসো মামলায় কেস ডায়েরিতে নির্যাতিতা নাবালিকার নাম ও ছবি দেওয়ার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়েছিলেন বাগুইআটি থানার তদন্তকারী অফিসার। থানার আইসি ও তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্যও বিধাননগর কমিশনারেটকে নির্দেশ দেয় আদালত।এবার অন্য একটি পকসো মামলায় নিগৃহীতার বয়ান রেকর্ড করার সময়ে যেভাবে তার পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি ওই মামলায় অভিযুক্তের জামিনের আর্জির শুনানির সময়ে বিচারপতি সন্দীপ মেহতা ও বিচারপতি প্রসন্ন বি ভারালের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট বলেছে, ‘পকসো আইনের ৩৩(৭) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২২৮এ ধারা এখানে যে মানা হয়নি, সেই ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানানো প্রয়োজন। ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ও ১৬১ ধারা অনুযায়ী নিগৃহীতার বয়ান রেকর্ডের সময়ে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আড়াল করা সংক্রান্ত শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মানা হয়নি।’
এক্ষেত্রে পুলিশ ও জুডিশিয়াল অফিসার অর্থাৎ বিচারক ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও আরও সংবেদনশীলতা প্রয়োজন বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চের নির্দেশ, ‘এই সংক্রান্ত নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও জুডিশিয়াল অফিসারদের আরও সংবেদনশীল করে তোলার কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।’ এই মামলায় অভিযুক্তের জামিনের আর্জিও খারিজ করেছে শীর্ষ আদালত।
বস্তুত নিপুণ সাক্সেনা বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের একটি মামলায় নিগৃহীতার পরিচয় আড়াল রাখার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তারপরেও পুলিশের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের একাংশের মধ্যেও এ ব্যাপারে সচেতনতার অভাব নিয়ে একাধিকবার সতর্ক করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। মামলাকারীর আবেদনের মধ্যে নির্যাতিতা নাবালিকার নাম দেখার পরেও সেই আবেদন সংশোধন না করিয়ে, বিচারক রায়ের মধ্যেও সেই নাম উল্লেখ করেছেন—এমন উদাহরণও রয়েছে।
তাই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী, বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মতো কলকাতা হাইকোর্টের যে বিচারপতিদের এজলাসে এই ধরনের মামলা শুনানির জন্য ওঠে, তাঁরা শুনানির আগেই মামলার পিটিশনে খুঁটিয়ে দেখে নেন, কোনওভাবে পকসো মামলার নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ হতে পারে, এমন কোনও ইঙ্গিত আছে কি না।
হাইকোর্টের বিচারপতিরাও একাধিকবার সতর্ক করেছেন এনিয়ে। কিন্তু পকসো মামলায় নিগৃহীতার পরিচয় যাতে কোনও প্রকাশ্যে না-আসে, সে নিয়ে সব মহলে সচেতনতা এখনও আসেনি বলে মনে করছেন প্রবীণ আইনজ্ঞরা।