• Blood Bank : ভোটে ব্যস্ত সব দল, রক্তের অভাব জেলায়
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে বেড সংখ্যা সাতশো। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে সাড়ে পাঁচশো। দুই হাসপাতালে সাকুল্যে রক্ত রয়েছে ১০ ইউনিট। হাজার বেডের সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে বি নেগেটিভ রক্ত রয়েছে ৩ ইউনিট, ও নেগেটিভ রক্ত ৪ ইউনিট। মাত্র ৭ ইউনিট রক্তের ভরসায় চলছে হাসপাতাল। শুধু বীরভূম নয়, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনপুর ও ঝাড়গ্রামে একই অবস্থা। পশ্চিম মেদিনীপুরের অবস্থা খানিকটা ভালো। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর আগে থেকে পরিকল্পনা করায় এখনও রক্তের সংকট দেখা দেয়নি।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় রক্তের সংকট মেটাতে সোমবার বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা। একদিকে প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে ভোট। দু’য়ের চাপে রক্তের আকাল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করলেও সেভাবে সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে তাঁদের আত্মীয়রা হাসপাতালে এসে রক্ত দিলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা মিটছে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সোসাইটির সহসভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘জেলায় জেলায় রক্তের আকাল চলছে এটা সত্যি। হঠাৎ করে তীব্র গরম, তার উপরে ভোট ও রমজান মাস। তাই শিবির সেভাবে হচ্ছে না৷’

    স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলির উদ্যোগেই জেলায় জেলায় রক্তদান শিবির হয়। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তা প্রায় বন্ধ। দলের নেতাকর্মীরা প্রচার, দেওয়াল লিখন, বাড়ি বাড়ি সম্পর্ক অভিযানে ব্যস্ত। অন্যদিকে, রমজান মাসের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ রোজার কারণে রক্তদান থেকে বিরত রয়েছেন। তবে কি রাজনৈতিক দলগুলির কোন দায় নেই? বীরভূম জেলায় রক্ত সংকটের ক্ষেত্রে শাসকদলকেই করেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রসিদ বলেন, ‘সবার আগেরাজ্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।’

    জেলা বিজেপির সভাপতি ধ্রুব সাহার মন্তব্য, ‘শাসকদলের এসব নিয়ে ভাবার সময় নিয়ে। তবে প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভোটের প্রচার ছেড়ে রক্ত দিতে যাব।’ বীরভূম জেলা তৃণমূল সহসভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরাই জেলা জুড়ে সব চেয়ে বেশি রক্তদান শিবির করি। নির্বাচনে কারণে হয়তো এখন একটু কমে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে রক্তদান নিয়ে বিরোধীদের মতো রাজনীতি আমরা করি না।’

    রামপুরহাট মহকুমাকে ইতিমধ্যে আলাদা স্বাস্থ্যজেলা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদ জেলার রোগীর চাপ চরম। এই ব্ল্যাডব্যাঙ্কে সোমবার এবি নেগেটিভ ৩ ইউনিট রক্ত রয়েছে। আর কোনও গ্রুপের রক্ত নেই। ইতিমধ্যে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ক্লাবগুলিকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য আবেদন করেছেন বীরভূম জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি। তিনি বলেন, ‘রক্তের সংকট মেটাতে সংগঠনগুলির কাছে শিবির করার আবেদন করেছি। কিন্তু সেভাবে এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি।’

    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন ৭০-৮০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। ভোট শুরু হওয়ায় কোনও রক্তদান শিবিরও হয়নি। সমস্যা মেটাতে কয়েকদিন আগে বহরমপুর অর্থোপেডিক সোসাইটি এগিয়ে এলেও রক্তের অভাব মিটছে না। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমরা ক্যাম্প করে ২০০ ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তা কয়েকদিনেই শেষ হয়ে গিয়েছে।’

    ঝাড়গ্রাম জেলায় তিনটি সরকারি ব্ল্যাডব্যাঙ্কে ২০০ ইউনিট রক্ত স্টকে রয়েছে। এ এবং এবি পজিটিভ গ্রুপের কোনও রক্ত নেই। সমস্যা মেটাতে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি রক্তদান শিবির করা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘এ বারে গরম এবং ভোট দুটো একসঙ্গে হওয়ার জেরে রক্তদানে একটু ভাটা পড়েছে। অনেক সংগঠন এগিয়ে এসে রক্তদান করছেন। ব্যক্তিগতভাবে ডোনার এনেও অনেক ক্ষেত্রে সমাধান করা হচ্ছে।’

    পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি স্বাস্থ্যজেলায় ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৬। সেখানে মার্চ মাসে ৮০৮১ ইউনিট ব্লাড কালেকশন হয়েছিল। চলতি মাসে ৭৪৫০ ইউনিট ব্লাড সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও বিভিন্ন সংগঠন, সরকারি অফিস ও কলেজে ক্যালেন্ডার করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলে রক্তের জোগান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’
  • Link to this news (এই সময়)