• Bird Flu : সুদূর অ্যান্টার্কটিকাতেও হানা বার্ড ফ্লুয়ের! মৃত্যু পেঙ্গুইনদের
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
  • অনির্বাণ ঘোষআশঙ্কাটা দেখা গিয়েছিল গত বছর ডিসেম্বরেই। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে এই এপ্রিলে দেখা গেল, পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ মেরুতেও এ বার হামলা চালিয়ে দিলো বার্ড ফ্লু! সম্প্রতি ৫৩২টি অ্যাডিলি পেঙ্গুইনের দেহ উদ্ধার হয়েছে অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডে। এর মধ্যে ৯টি পাখির শরীরে মিলেছে H5N1 ভাইরাসের অ্যান্টিজেন, যা কি না বার্ড ফ্লুয়ের জীবাণু হিসেবেই পরিচিত।

    বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন এটাই ভেবে যে, নিরন্তর জলবায়ু পরিবর্তন ও পাখিদের মাইগ্রেশনে ভর করে যেখানে সুদূর দক্ষিণ মেরুকেও ছাড় দিলো না আগ্রাসী বার্ড ফ্লুয়ের প্রকোপ, সেখানে বাকি দুনিয়া কতটা ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই জীবাণুর জন্য। ব্যতিক্রম নয় বাংলা-সহ গোটা ভারতও। ওই জীবাণুর প্রকোপ যে এখন আর আগের মতো বিরল নেই, সেটাও ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।

    ব্যাপারটা কী

    গত বছর ডিসেম্বর এবং এ বছর জানুয়ারি মাসে বরফে মোড়া অ্যান্টার্কটিকায় ডিজি়জ় মনিটরিং অভিযান চালানোর সময়ে দেখা যায়, কিছু আপাত সুস্থ পেঙ্গুইন, স্কুয়া এবং অ্যান্টার্কটিক পানকৌড়ির রক্তে রয়েছে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের অ্যান্টিবডি।

    সন্দেহটা তখনই দানা বাঁধে, এই সামুদ্রিক পাখিরা কি H5N1 ভাইরাস বা মারাত্মক ছোঁয়াচে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার কবলে পড়েছে? অন্যথায় বার্ড ফ্লুয়ের ইমিউনিটি তারা পেল কোথা থেকে? নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের (এ ক্ষেত্রে ভাইরাস) সংক্রমণ কিংবা টিকাকরণ ছাড়া তো অ্যান্টিবডি আসার কথা নয়!

    এপ্রিলের গোড়ায় আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হলো। দেখা গেল, অন্তত ৫৩২টি পেঙ্গুইনের মৃত্যু হয়েছে। আরও আশঙ্কা, বরফের তলায় চাপা পড়ে আছে হাজারেরও বেশি পেঙ্গুইন, স্কুয়া, গাল, পানকৌড়ির মতো সামুদ্রিক পাখির দেহ।

    বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত, কী ভাবে জনবিরল এবং বাকি মহাদেশগুলি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন একটি মহাদেশে সেঁধিয়ে গেল এমন ভাইরাস, যার মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা রয়েছে!

    কী ভাবে হলো

    বিজ্ঞানীদের অনুমান, কেবল পরিযায়ী পাখিদের মাধ্যমেই বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ঢুকে পড়েছে অ্যান্টার্কটিকায়। ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের অনেকের সন্দেহ, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে এবং পরিযায়ী পাখিদের দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জি়ল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার ফলেই এমনটা হয়েছে।

    ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘গত বছর চিলি, আর্জেন্টিনা-সহ দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে বার্ড ফ্লু মহামারীর আকার নিয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকার প্রান্তসীমা থেকে কিন্তু দক্ষিণ মেরুর দূরত্ব খুব বেশি নয়— বড়জোর ৬০০-৭০০ মাইল। ফলে, পরিযায়ী পাখিরা সেখান থেকেও সংক্রমণটা পেতে পারে।’

    ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষ মনে করেন, পেঙ্গুইন এবং এই সব পরিযায়ী পাখি যেহেতু সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে থাকে, বিশেষত প্রজননের মরশুমে, তাই সংক্রমণটা গোটা গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়াতে সময় লাগেনি। পরিবেশগত পরিবর্তনও কাজ করেছে এর নেপথ্যে। তাই, H5N1 নিরন্তর মিউটেট করে রূপ বদলে চলেছে। যা আরও বেশি সংক্রামক।

    ভয়টা যেখানে

    ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলছেন, ‘এই ধরনের সামুদ্রিক পাখিরা, বিশেষত পেঙ্গুইন দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করে এবং প্রজননের সময়ে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকে বলে তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে H5N1 ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। পেঙ্গুইনদের মধ্যে মড়ক লাগানোর জন্য এটা যথেষ্ট।’

    বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বিপর্যয় বস্তুত হিমশৈলের চূড়া মাত্র। পেঙ্গুইনের অর্ধেক প্রজাতিই যেখানে বিপন্ন, সেখানে এমন ‘ভার্জিন’ বন্যপ্রাণের ক্ষেত্রে বার্ড ফ্লুয়ের সংক্রমণ ঘাতক হয়ে উঠতে পারে।

    ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থর সাফ কথা, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে আমরা এ রকম আরও দেখবো। এখন না-হলেও অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের ভাইরাসের সমস্যা সামুদ্রিক প্রাণীদের উপর আরও যে আসবে না, সেটা কে বলতে পারে? বিষয়টা এখনই আতঙ্কের নয়। তবে এখনই সতর্ক হতে হবে সকলকে।’

    আশা-আশঙ্কার দোলাচল

    আশার কথা হলো, বার্ড ফ্লু এখনও পর্যন্ত মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর নজির নেই। গত ২২ বছরে পাখি থেকে মানুষে এই রোগ ছড়ানোর নজির রয়েছে ২৩টি দেশের ৮৮৭টি ক্ষেত্রে।

    আশঙ্কার কথা হলো, এতে মৃত্যুহার প্রায় ৫২ শতাংশ। ৮৮৭টি সংক্রমণের মধ্যে ৪৬২টি ক্ষেত্রেই সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানাচ্ছে।
  • Link to this news (এই সময়)