• Illegal Mining : অবৈধ খননের খোঁজ পেতে মাঝরাতে টহলে IAS, খুনের চেষ্টা
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
  • চণ্ডীগড়: তখন রাত একটা। বছর ২৯-এর এক ব্যক্তি হরিয়ানার নারায়ণগড়ে নিজের বাড়ি থেকে গাড়িতে বেরিয়েছিলেন অঞ্চলে কোনও অবৈধ খননকাজ (মাইনিং) চলছে কি না, তা দেখতে। তিনি ছাড়াও ওই গাড়িতে ছিলেন চালক-সহ আরও তিন জন। গাড়িটি কিছুটা যাওয়ার পরেই তাঁরা লক্ষ্য করেন, তাঁদের পিছু নিয়েছে একটি ইনোভা। তাঁরা যেই গাড়িটিকে থামার জন্য ইশারা করেন, তখনই ওই গাড়ির চালক স্পিড বাড়িয়ে অন্য গাড়িটিকে ধাক্কা মেরে স্পিড তুলে বেরিয়ে যায়।এ বার ইনোভাকে ধাওয়া করে অন্য গাড়িটি, সেই সময়ে গাড়ি ঘুরিয়ে এনে ফের এই গাড়িটিকে ধাক্কা মারার চেষ্টা করে ইনোভা। তবে এ বার এক চুলের জন্য ধাক্কা লাগেনি। তা না হলে, ২০২১ ব্যাচের আইএএস যশ জালুকার নাম হয়তো স্মরণ করা হতো নিহত আইওসি-র অফিসার শন্মুগান মঞ্জুনাথ, নিহত আইএএস অফিসার সত্যেন্দ্র দুবেদের সঙ্গে।

    পরের দু’জনই সরকারি দুর্নীতি আটকাতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন মাফিয়াদের হাতে। ২৯ বছরের আইএএস অফিসার যশ জালুকার পরিণতিও তাই হতে পারত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। দিল্লি স্কুল অফ ইকনোমিক্স থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করে ২৬ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় সফল হন যশ।

    সারা দেশে চতুর্থ হওয়ায় তিনি আইএএস-এর জন্য নির্বাচিত হন। আদতে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ার বাসিন্দা এই তরুণ অফিসার চেয়েছিলেন হোম ক্যাডারে পোস্টিং, কিন্তু পান হরিয়ানা ক্যাডার। সেই সূত্রেই বর্তমানে তিনি আম্বালার জালুকা সাব ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার। সেখানে হামেশাই অবৈধ খননের অভিযোগ ওঠে।

    সে জন্যই তিনি গত ২৭ মার্চ গভীর রাতে ব্যক্তিগত গাড়িতে তিনি তাঁর পিএসও জসবীর সিং, স্থানীয় তেহসিলদার অভিষেক পিলানিয়াকে নিয়ে সেই সব অঞ্চলে টহল দিতে বেরোন। সূত্রের খবর, এসডিএম টহলে আসছেন, এ কথা যাতে অবৈধ কারবারিদের কানে না পৌঁছয় সে জন্যই তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে বেরিয়েছিলেন। তাতে এমন কোনও মার্ক নেই, যেখান থেকে তিনি যে সরকারের পদস্থ অফিসার বোঝা যায়।

    তা সত্ত্বেও কোনও ভাবে মাফিয়াদের কানে খবর পৌঁছে যায়। তদন্তকারীদের অনুমান, তার পরেই যশকে খুন করার লক্ষ্যে বারবার তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে মাফিয়ার দলবল। ঘটনা ২৭ মার্চ রাতের হলেও ৫ এপ্রিল এফআইআর দায়ের করেন তাঁর পিএসও জসবীর। তিনি কনস্টেবল।

    এফআইআর-এ তিনি লেখেন, ‘এসডিএম যশ জালুকার প্রাইভেট গাড়িতে আমরা ২৭ মার্চ রাত ১টা নাগাদ বেরনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি এসইউভি(ইনোভা) আমাদের ফলো করে। প্রথমবার তোকা সাহিব গুরুদ্বার গ্রামের ব্রিজের কাছে এসডিএম গাড়িটি থামানোর ইশারা করতেই ইনোভাটি তাঁর গাড়িকে তীব্র গতিতে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়। একটুর জন্য বেঁচে যান উনি। তার পরে আবার একই চেষ্টা করা হয়।’

    পুলিশ জানিয়েছে, এসইউভি-র চালক মাইনিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সেখানে যে অবৈধ কার্যকলাপ চলে তা আড়াল করতে সে প্রথমে এসডিএম-কে আটকাতে চেষ্টা করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ড্রাইভারের কাছে নির্দেশ ছিল যে করে হোক ওই আইএএস অফিসারকে মাইনিং বেল্টে পৌঁছনো থেকে আটকে দেওয়া। তা না পারলে, মেরে ফেলা।

    সে দু’টোই চেষ্টা করেছিল ২৯ বছরের ওই তরুণ আইএএস-কে আটকাতে। কিন্তু পারেনি। পুলিশের মতে, পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় সম্ভবত হোয়াটসঅ্যাপে সরকারি কর্তার লোকেশন শেয়ার করছিল অন্যদের। এই বিষয়ে নারায়ণগড় থানার ইনচার্জ ইনস্পেক্টর রামপাল সিং জানান, এসডিএম নিরাপত্তারক্ষী জসবীর সিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

    ইনোভা গাড়ির মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, খুনের চেষ্টা-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করে তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এসডিএম কেন পর দিনই এফআইআর দায়ের করেননি। তা হলে কি তাঁকে কেউ ভয় দেখিয়ে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসা থেকে আটকানোর চেষ্টা করছিল?

    কোনও প্রভাবশালী কি এই অবৈধ মাইনিং-এর সঙ্গে যুক্ত, সে জন্যই কি তরুণ এই অফিসার তাঁর উপরে প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা করা সত্ত্বেও অভিযোগ জানাতে সময় নিলেন? সর্বোপরি, নিজে এফআইআর না করে তাঁর পিএসও-কে দিয়েই বা তা করালেন কেন? এই সব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদেরও।

    যশ কেমন আছেন বা কী হয়েছিল তা নিয়ে নিজে মুখ খোলেননি। সূত্রের খবর, এই আইএএস নাকি চেয়েছিলেন এই ঘটনা সামনে না আসুক কারণ তাতে অন্য অফিসাররা দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে ডি-মরালাইজ়ড হয়ে যাবেন। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, যে মিশনে তিনি নেমেছেন, সেটা থেকে তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হবেন না।

    তবে হরিয়ানায় এই ঘটনা নতুন নয়। সরকারে যেই থাকুক, তাদের মদতেই এই সব অবৈধ খনন চলে বলে অভিযোগ বহু দিনের। কেউ কেউ এমনও দাবি করেন যে, লভ্যাংশের একাংশ যায় কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা ও কোনও কোনও সরকারি অফিসারের পকেটে। প্রায় দু’বছর আগে এই হরিয়ানারই নুহ-তে ডিএসপি সুরিন্দর সিং যখন অবৈধ খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালাছিলেন, তাঁকে একটি ডাম্পার চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। বছরখানেক আগে পানিপথের বাপোলিতে পুলিশের উপর আক্রমণ করে মাফিয়ারা।
  • Link to this news (এই সময়)