রবিবার সন্ধ্যা ছ'টা। আমি বড়মার ঘরের সামনেই বসে ভক্তদের সঙ্গে কথা বলছি। হঠাৎই শুনতে পাই শান্তনু ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুর ও তাদের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর দলবদল নিয়ে মেলায় ঢুকেছে। সেখানে আমাদের দলের কয়েকজনকে মারধর করে ওরা। এর পরেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে শান্তনু, সুব্রত, মঞ্জুল, তাঁর স্ত্রী ছবি ও শান্তনুর স্ত্রী সোমা চলে আসে বড়মার ঘরের প্রধান গেটের সামনে।তাদের সঙ্গে ছিল শ-দুয়েক বিজেপির ক্যাডার। শান্তনুর নেতৃত্বে বিজেপির ক্যাডার বাহিনী বড় হাতুড়ি, শাবল দিয়ে গেটের তালা ভাঙতে শুরু করে। শান্তনু নিজেই তালা ভেঙেছে। তালা ভাঙার আগেই ঘরের সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে। সে সময় বড়মায়ের মন্দিরে ছোট মেয়ে মধুপর্ণাকে নিয়ে বসে ভয়ে কাঁপছিলাম আমি।
আমাদের মন্দিরে হরি বোল ধ্বনি দেন মতুয়া ভক্তরা। সেখানে বিজেপির বাহিনী জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলেছে। সম্পর্কে আমি শান্তনুর জেঠিমা। অথচ বড়মার পবিত্র ঘরে ঢুকে আমার উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে শান্তনু। রাত এগারোটার পর আমি গাইঘাটা থানায় পুলিশের কাছে শান্তনু-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ করি।
রাত একটায় বাড়িতে ফিরে দেখি বড়মার মন্দিরের গেট, প্রধান কোলাপসিবল গেট, ভিতরের আরও একটি গেট এমনকী আমার ঘরেও তালা লাগিয়ে দিয়ে সকলে নিজের বাড়িতে চলে গেছে। আমি একজন রাজ্যসভার সাংসদ। সাংসদ হিসেবে আগামী বুধবার আমার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার দুপুরে আমার দিল্লি যাওযার ফ্লাইট। আমার ঘরের ভিতরেই শপথ অনুষ্ঠানের সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে।
ঘরের বাইরে তালা দেওয়া। কী ভাবে আমি দিল্লিতে শপথ নিতে যাব বুঝতে পারছি না। কাল সন্ধ্যার পর থেকে পর থেকে এক কাপড়ে রয়েছি। চোখে ঘুম নেই। সকালে ব্রাশ পর্যন্ত করতে পারিনি। ১৯৮৫ সালে আমার বিয়ের পর থেকেই বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের পাশের ঘরেই থাকি আমি। বড়মার ঘরের ভিতর দিয়েই আমার ঘরে যেতে হয়। বড়মার মৃত্যু হয়েছে ২০১৯ সালে।
এতদিন সে ঘরের দখল নেওয়ার কথা মনে পড়েনি ওদের? মন্দিরের প্রধান গেটের পাশের একটা গেট সব সময়েই খোলা থাকে। রবিবার সন্ধ্যাতেও সেটা খোলা ছিল। ওরা ইচ্ছা করলে ওই গেট দিয়ে ঢুকতে পারত। তা না করে সন্ত্রাস চালাল। আসলে এ বছর বারুনির মেলায় রেকর্ড ভিড় হয়েছে মতুয়াদের।
সিএএ ইস্যুতে মতুয়াদের বড় অংশ বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ বছর তুলনায় কম সংখ্যক মতুয়া ভক্ত শান্তনুর বাড়িতে গেছে। ফলে ও বুঝতে পেরেছে, ওর পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। আমি একজন বিধবা মহিলা। আমার উপর এই অত্যাচারের বিচারের ভার মতুয়া সম্প্রদায়ের উপরেই ছেড়ে দিলাম।