• News Paper : জেলবন্দি সাংবাদিকের স্মরণে পেপারের প্রথম পাতাই ব্ল্যাঙ্ক!
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: নিউজপেপারটার প্রথম পাতায় একটা বড় অংশ জাস্ট সাদা! ছাপার অক্ষরে কিছুই লেখা নেই সেখানে। শুধু উপরে বড় বড় হরফে লেখা ‘HIS STORY SHOULD BE HERE’ অর্থাৎ, তাঁর করা খবর এখানেই থাকার কথা ছিল। কার স্টোরি?রুশ সেনার হাতে বন্দি সাংবাদিক ইভান গার্সকোভিচের জেলযাত্রার এক বছর অতিক্রান্ত। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ‘অন্যায় ভাবে’ গ্রেপ্তার হওয়া সহকর্মীকে এ ভাবেই মনে রেখেছে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর টিম। বছর খানেক আগে খবর করতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন ইভান। তাঁকে প্রথমে আটক করে রুশ সেনা। তার পর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাঁকে পাঠিয়ে দেয় জেলে।

    ঠান্ডা যুদ্ধের পর রাশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জেলে যাওয়া প্রথম রিপোর্টার ইভান। সেই সাংবাদিককেই একেবারে অভিনব ভাবে স্মরণ মার্কিন সংবাদপত্রে। সেই সঙ্গে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে বার্তাটাও খুব স্পষ্ট। ইভানের সহকর্মী এলিট ব্রাউন তাঁর ২৯ মার্চের কাভার স্টোরিতে লিখেছিলেন, ‘আটক হওয়ার আগে পর্যন্ত ইভান ছিলেন বন্ধু সার্কেলের চুম্বক। যেখানেই থাকতেন, মাতিয়ে রাখতেন। গত এক বছর ইভানের কণ্ঠকে যেন রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। জীবন চলছে, শুধু ইভান নেই।’

    ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর সোমবারের এডিশনে আরও বেশ কিছু জায়গা ব্ল্যাঙ্ক রাখা হয়েছে। এক জায়গায় হেডিং লেখা ‘This Story Cannot Be Written’ অর্থাৎ যে স্টোরি (খবর) লেখা যায়নি। একটা ফাঁকা ছবির বাক্স, সঙ্গে ক্যাপশন— ‘UNREPORTED.’ জার্নালের ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ের এসভিপি অ্যালেক্স ডাউসি জানান, প্রিন্ট ভার্সনে সাংবাদিককে স্মরণ করার এই অভিনব পরিকল্পনা ক্রিয়েটিভ কোম্পানি ‘মাদার’ এবং জার্নাল-এর নিউজ়রুমের।

    শেষের দিকে ব্ল্যাঙ্ক স্পেসে লেখা, ‘এক বছর আগে ইভান গার্সকোভিচকে রাশিয়া জেলে পুরেছিল, শুধুমাত্র সাংবাদিকতার অপরাধে। তাঁর নীরবতা এখনও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমরা তাঁর কণ্ঠস্বর ফেরত চাই। #IStandWithEvan’ লিঙ্কডইন পোস্টে ডাউসি লিখেছেন, ‘কখনও কখনও সবচেয়ে শক্তিশালী মন্তব্যের জন্য কোনও শব্দের প্রয়োজন হয় না। আজ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ফাঁকা ফ্রন্ট পেজ অনেক কথা বলে দেয়।’

    সংবাদপত্রের পাঠক এবং অন্যান্য মিডিয়া হাউস থেকেও খুবই ইতিবাচক ফিডব্যাক পেয়েছেন বলে জানান ডাউসি। জার্নালের এডিটর-ইন-চিফ এম্মা তাকারের আশা, পরের বছর এই সময়ের মধ্যে ইভান নিশ্চয়ই মুক্তি পাবেন। আর সেটা নিশ্চিত করতে হলে লোকের মনে ইভানকে জাগিয়ে রাখতে হবে, যাতে সকলে মিলে সরকারের উপর চাপ জারি রাখা যায়।

    ইভানের গ্রেপ্তারি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও। প্রসঙ্গত, ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম’ ইনডেক্সে ভারতের অবস্থানও খুব একটা ভালো নয়। ‘রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্স’ প্রকাশিত ২০২৩-এর রিপোর্ট বলছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকের নিরিখে ভারতের স্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১, যা আগের বার ছিল ১৫০।

    অর্থাৎ, ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতের স্থান যেখানে ১৬১, রাশিয়ার স্থান তার ঠিক তিন ধাপ নীচেই— ১৬৪! ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবশ্য দাবি, এ ধরনের র‍্যাঙ্কিং দেশের আসল চিত্র তুলে ধরে না। ভারতে মিডিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী এবং স্বাধীন। কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র মতো কঠোর ধারায় মামলা হয়েছে।

    ঘটনাচক্রে এই সাংবাদিকদের প্রায় সকলেই কোনও না কোনও সরকারি বিষয়ের তদন্তমূলক রিপোর্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন! সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের ঘটনা অবশ্য সব সরকারের আমলেই হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম দু’দিন সংবাদপত্র প্রকাশের উপর পুরোদস্তুর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার।

    দু’দিন পর সংবাদপত্র ছাপার অনুমতি মিললেও ভারতের দু’টি ইংরেজি সংবাদপত্র জরুরি অবস্থার প্রতিবাদে এডিটোরিয়াল পাতা সাদা রেখেই পেপার ছেপেছিল। সেই প্রতিবাদের ঝলকই যেন দেখা গেল ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ।
  • Link to this news (এই সময়)