Solar Eclipse 2024 : আমেরিকায় সূর্যগ্রহণে মাঝরাতে অগ্নিপরীক্ষা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের
এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
উন্মাদনায় ফুটছে আমেরিকা। সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে হবে যে! উত্তেজনা কিছু কম নেই কলকাতাতেও। গবেষণার জন্য সূর্যের করোনার যে গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা, তারই অগ্নিপরীক্ষা নেবে এদিনের সূর্যগ্রহণ। কাজেই পরীক্ষার রেজ়াল্ট বেরোনর কয়েক আগে পড়ুয়াদের মনের অবস্থা যেমন হয়, কলকাতার বিজ্ঞানীদের অবস্থাও তেমনই।পর পর হোটেল আর মোটেলে ‘নো-রুম’ নোটিশ ঝুলছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত যে নর্থ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর অন্যতম সে বিষয়ে সংশয় নেই। কিন্তু একসঙ্গে ১০ লক্ষ মানুষ নায়াগ্রায় জমা হয়েছেন এমন নজির নেই। অনলাইন বুকিং শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। ৭ এপ্রিল থেকে যাঁরা আসতে শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকেরই বুকিং নেই।
মেক্সিকো থেকে ক্যানাডা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় চার হাজার কিলোমিটার লম্বা একটা ফালি। খুব বেশি হলে ১৮৫ কিলোমিটার চওড়া ওই ফালিটার ওপর নজর এখন কয়েক কোটি মানুষের। ওই ফালির মধ্যে যাঁরা আছেন, ৮ এপ্রিল সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হচ্ছেন তাঁরাই। ২০১৭-র পর ২০২৪ — সাত বছর পর সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে চলেছে নর্থ আমেরিকা।
তাই গ্রহণ নিয়ে সে দেশে উন্মাদনার শেষ নেই। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ ‘ইক্লিপস স্পেশ্যাল ডিশ’ এবং ককটেল-মকটেল চালু করেছে। এছাড়া কয়েক কোটি মানুষ সান ফিল্টার নিয়ে তৈরি হয়েছেন চাঁদের ছায়ায় সূর্যের ঢাকা পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে। ক্যানাডার টরোন্টের মতো যে জায়গার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, সেখানকার বাসিন্দাদের মন খুবই খারাপ।
নায়াগ্রা থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইআইএসইআর) আওতায় থাকা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্স ইন্ডিয়ার (সিইএসএসআই) সৌরবিজ্ঞানীরা সূর্য নিয়ে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ব্যস্ত। এখানকার বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর সৌর অভিযান মিশন আদিত্য এল-ওয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত।
সোমবার দিব্যেন্দু নন্দী ‘এই সময়’কে বলেন, ‘সূর্যের ফটোস্ফিয়ার বা ছটামণ্ডলের তীব্র ঔজ্জ্বল্যের জন্য আমরা সূর্যের করোনা অংশটি দেখতে পাই না। পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময়ে চাঁদ ছটামণ্ডল ঢেকে দেয়। তখন সূর্যের করোনা বা আবহমণ্ডলটি আমাদের সামনে আসে। করোনার গঠন কেমন হবে সেটা পুরোটাই সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করছে। আমরা ইতিমধ্যেই সূর্যের বিভিন্ন অংশের কিছু গাণিতিক মডেল তৈরি করেছি। সেগুলো কতটা নির্ভুল হয়েছে, গ্রহণে তারই পরীক্ষা হবে।’
অধ্যাপক নন্দীর তত্ত্বাবধানে এমন দু’টি মডেল তৈরি করেছেন সিইএসএসআই-এর গবেষক শাওন্বিতা পাল। তিনি বলছেন, ‘আমাদের তৈরি দু’টো মডেল হলো ‘সারফেস ফ্লাক্স ট্রান্সপোর্ট’ এবং পোটেনশিয়াল ফিল্ড সোর্স সারফেস মডেল’। আমরা কম্পিউটর সিমুলেশনের মাধ্যমে যে গাণিতিক মডেল তৈরি করেছি, সূর্যগ্রহণ হাতে-কলমে প্রমাণ করবে আমাদের হিসেব কতটা ঠিক।’
মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সোমবার ভারতীয় সময় রাত ৯টা ১২ মিনিট থেকে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। পূর্ণগ্রাস পর্ব শুরু হবে রাত ১০টা ৮ মিনিট থেকে। রাত ২টো ২২ মিনিটে গ্রহণ ছেড়ে যাবে। অবস্থানগত কারণের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে এই গ্রহণ কিছুমাত্র দেখা যাবে না। নিজেদের তৈরি মডেলগুলো কতটা ঠিক এই গ্রহণ থেকে সেটা মিলিয়ে নেওয়া যাবে বলে উৎসাহের অভাব নেই ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে।