বন্যপ্রাণ-পরিবেশ রক্ষা জীবন ও আইনি সুরক্ষার অধিকারে স্বীকৃত, জানল শীর্ষ কোর্ট
এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
নয়াদিল্লি: ভারতীয় সংবিধানের ২১ ধারায় জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃত, একই ভাবে ১৪ ধারায় আইনের চোখে সকলের সমানাধিকার এবং আইনি সুরক্ষার অধিকার বর্ণিত হয়েছে। সেই একই ধারা দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবের থেকে মানুষকে রক্ষা করার অধিকারও সুনিশ্চিত করে— একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনটাই জানাল প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।‘গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড’দের বাসস্থান সুরক্ষিত করার একটা মামলায় চলছিল শুনানি। ২০২১-এর ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, এই পাখিগুলোকে বাঁচাতে ৯৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ওভারহেড বিদ্যুতের লাইন রাখা যাবে না। সব লো এবং হাই ভোল্টেজ পাওয়ার লাইনকে আন্ডারগ্রাউন্ড করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতেরই অন্য বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় পরিবেশ মন্ত্রক, বন এবং জলবায়ু মন্ত্রক, বিদ্যুৎ মন্ত্রক এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি মন্ত্রক।
সুপ্রিম কোর্টের পুরোনো রায়ে কিছু বদলের আর্জি জানিয়েছিল তারা। যুক্তি ছিল, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎপাদন বাড়ানো এবং দূষণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে গেলে রাজস্থান এবং গুজরাটের একটা বড় অংশে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি ইউনিট তৈরির চেষ্টা ব্যাহত হবে। হাইভোল্টেজ লাইন মাটির নীচে নিয়ে যাওয়াও মুশকিল।
এই মামলার প্রেক্ষিতেই শীর্ষ কোর্টের বক্তব্য, ‘সংবিধানের ৪৮এ ধারায় দেশের জঙ্গল, বন্যপ্রাণ, পরিবেশকে সুরক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ৫১এ ধারার ক্লজ় জি অনুযায়ী, জঙ্গল, নদী, হ্রদ, বন্যপ্রাণ রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। এটাই বুঝিয়ে দেয়, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সংবিধানেও উল্লিখিত। পরিবেশের এই গুরুত্ব সংবিধানের ২১ এবং ১৪ নম্বর ধারাতেও স্বীকৃত। এই ধারাগুলি শুদ্ধ পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব থেকে বাঁচার অধিকারও নিশ্চিত করে। শুদ্ধ পরিবেশ না থাকলে জীবনের অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বায়ুদূষণ, উষ্ণায়ন, খরা বা খাবারের সঙ্কট হলে স্বাস্থ্যের অধিকারও লঙ্ঘিত হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের ২০২১ সালের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার লাইন কোথায় বসানো যাবে, কী ভাবে তা খতিয়ে দেখতে ৯ সদস্যের কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ২০২৪-এর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটিকে কাজ শেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।