• নির্বাচন তো কী? শহর পরিষ্কার রাখার শপথ বেঙ্গালুরুবাসীর
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৪
  • লোকসভা নির্বাচন ঘিরে রাজ্য-রাজনীতি ধীরে ধীরে উত্তাল হয়ে উঠছে। মিটিং-মিছিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সভা থেকে শাসক ও বিরোধী শিবিরের তরজা, একে অপরের উদ্দেশ কটূক্তি এবং সর্বোপরি যখন সমস্ত ধরনের সৌজন্যবোধ তলানিতে এসে ঠেকেছে, ঠিক একই সময়ে প্রায় ১,৯০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের সিলিকন ভ্যালি বেঙ্গালুরুতে নির্বাচনের ন্যূনতম উত্তাপটুকুও নেই।শহরের কোল্লার, রাজাজিনগর, কমার্শিয়াল স্ট্রিট, ব্রিগেড রোড, চার্চ স্ট্রিট, কৃষ্ণরাজপুরা, কল্যাণনগর, নাগওয়াড়া, নহরুনগর, ইয়েলহাঙ্কা, হোয়াইটফিল্ড সমেত একাধিক জায়গা ঘুরে দেখা মিলল না একটিও নির্বাচনী হোর্ডিং বা ব্যানারের। শাসক-বিরোধীরা এ ক্ষেত্রে যেন এক পণ নিয়েছে— শহর পরিষ্কার রাখতে হবে।

    শহরের রাজাজিনগরের বাসিন্দা পেশায় ক্যাবচালক প্রগতিশ্বরণের কথায়, ‘আগামী ২৬ এপ্রিল এবং ৭ মে, দু’দফায় কর্নাটকে ভোট হবে। কিন্তু কোনও দলই এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করেনি। নির্বাচনের দু’দিন আগে প্রচারগাড়ি করে মাইকিং হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তা-ও নির্বাচনী বিধি মেনে একদিন আগেই বন্ধ করে দিতে হবে।’

    ভোট নিয়ে কোনো হেলদোল নেই প্রায় গোটা শহরের। শুধুই কী এই শহর? নেপালের বাসিন্দা, পেশার কারণে বেঙ্গালুরুতে থাকেন বিশাল খাত্রি। তিনি বলেন, ‘শুধু বেঙ্গালুরু নয়, এই চিত্র গোটা কর্নাটকেই।’ দুবাই এবং কাতারে দীর্ঘদিন ক্যাব চালিয়েছেন বিশাল। কিন্তু সেখানে লাইসেন্স রিনিউয়াল নিয়ে হাজারো ঝামেলা পোহাতে হয় বলে বেঙ্গালুরুতে চলে এসেছেন। এই শহরের নিত্য ব্যস্ততার মধ্যে তাঁর কাজের অভাব হয় না।

    কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির জনতা সবসময়েই চিত্রাভিনেতাদের নিয়ে আবেগপ্রবণ। তার উদাহরণও হাতেনাতে পাওয়া গেল। গত ১৭ মার্চ জন্মদিন গিয়েছে জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা পুণীত রাজকুমারের। তাঁর বাবা রাজকুমারও কন্নড় চলচ্চিত্রের নামজাদা শিল্পী ছিলেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং লাগিয়ে পুণীতকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা।

    কিন্তু রাজনৈতিক কোনও ব্যক্তিত্বের হোর্ডিং তো দূর স্থান, সামান্য একটি পোস্টারও দূর-দূরান্তে নেই। নির্বাচনী হাওয়া বুঝতে প্রশ্ন করা হলে ক্যাটারিং সংস্থার কর্মী ইয়েদ্দাপ্পা বলেন, ‘রাজ্যের কংগ্রেস সরকার সকলের জন্য বিনাপয়সায় চাল দেওয়া, বিদ্যুতের বিলের উপরে ২০ শতাংশ ছাড়, মহিলাদের জন্য সরকারি বাসে নিখরচায় যাতায়াতের সুবিধা দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মেট্রো, রাস্তা তৈরির মতো পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি মাঝরাস্তায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজেই কে জিতবে তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। খেটে খাওয়ার রাস্তা খোলা থাকলেই যথেষ্ট।’

    কিন্তু এই এক জায়গায় যেন পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোথাও মিল পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যের। যেখানে কেন্দ্রের শাসকদল ক্ষমতায় না থাকার কারণে প্রকল্প খাতে বরাদ্দ মঞ্জুর করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রের শাসকদলের দাবি, রাজ্য সরকার প্রকল্প খাতে বরাদ্দ করা অর্থ বিভিন্ন বিদ্যুতের বিলে ছাড় দেওয়ার মতো জনমোহিনী প্রকল্পে খরচ করছে।

    শহরের প্রবল জলসঙ্কটের দায়ও বর্তমান সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও শনিবার বিকেলের চার্চ স্ট্রিট, কমার্শিয়াল স্ট্রিট দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। ছুটির বিকেল উপভোগ করতে বয়স্ক থেকে কমবয়সি ছেলেমেয়েদের ভিড়, ফুটপাথের খাবারের স্টল, দোকানগুলির সামনে সাড়ি দিয়ে দাঁড় করানো দামি গাড়ির ভিড়েও ঝকঝকে রাস্তায় যেন শহর পরিষ্কার রাখার শপথ ঝিলিক দিচ্ছে।
  • Link to this news (এই সময়)