তাঁর হাত ধরেই তাবড় তাবড় রাজনীতিক ভোটের বৈতরণী পারা করে করেছেন সহজ ভাবে। তাঁর ট্রিকস ও টিপসে জয় হাসিলের রাস্তা হয়েছে মসৃণ। তাঁর পরামর্শ মেনে কাজ করেই এসেছে কাঙ্খিলত সাফল্য়। নিজে রাজনীতিক নন, ভোট কুশলী। ভোটে জেতার জন্য কোন মাল-মশলা দরকার সেসব তাঁর নখদর্পণে। কোন পথে চললে জয় হাসিল নিশ্চিত সেই বিষয়ে পরামর্শ নিতে দুঁদে রাজনীতিকরাও তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। নিজে তথাকথিত রাজনীতিক নন তবে রাজনীতির হালহকিকত চেনে হাতের তালুর মতো চেনেন। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কার কথা হচ্ছে? প্রশান্ত কিশোর। লোকসভা ভোটের আগে যাঁর প্রসঙ্গে কথা না বললেই নয়। একসময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সুসম্পর্কের কথা ছিল সর্বজনবিদিত। তবে সেই সখ্যতা সাম্প্রতিক সময় আর নজরে আসে না।এক সময় প্রশান্ত কিশোর হয়ে উঠেছিলেন মোদী শিবিরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রচার বিশেষজ্ঞ। রাজনৈতিক মহলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের পেছনে মূল কান্ডারি ছিলেন প্রশান্ত কিশোরই। নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, নানা উদ্ভাবনী কৌশলের জেরে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন পিকে। তাঁর কৌশলের জেরেই প্রতিপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিজেপি শিবির প্রচার ময়দানে দশ গোল দিয়ে বেরিয়ে যেতো। এসব কথা এখনও শোনা যায় রাজনীতির অন্দর মহলে। ২০১২ সালে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই প্রশান্ত কিশোর পেশাদার প্রচার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন। মোদীকে তৃতীয় বারের জন্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে পিকের ভূমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। ২০১৪ সালে মোদীর হয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল ঠিক করার দায়িত্বও পিকের উপর ছেড়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিল গেরুয়া শিবির। তুখোর বুদ্ধিতে সেখানেও বাজিমাত করেন পিকে। কার্যত প্রশান্ত কিশোরের কৌশলের সামনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সমস্ত পরিকল্পনা খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল। বিপুল ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী চেয়ার দখল করেছিলেন। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের পর অবশ্য পিকে- নরেন্দ্র মোদী সখ্যতার ফ্যাকাসে হতে থাকে। যদিও এরপরেও প্রচারকৌশলী হিসেবে তিনি কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি মন দিয়েছেন বিহারের জন সূরজ যাত্রায়।
তিনি কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জেতাতে কোনও দিন টাকা নিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আনফিল্টার্ড বাই সমধীশ ইউটিউব চ্য়ানেলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন, 'আমি কখনও প্রফেশানাল ফি নিইনি কোনও দিন। সেই ভালো ব্য়বহারটাই কাজেও লাগছে পরবর্তীকালে। আমি কারও থেকে কখনও ব্যক্তিগত ফি নিইনি, এটা আমি আগেও একাধিকবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক ক্যাম্পেনের যা খরচ হয়েছে তা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। আমারও যা খরচ হয়েছে তাও আমায় মিটিয়েছে। তার মানে এটা নয় যে প্রশান্ত কিশোরের কাছে এসে কেউ তাঁকে ২৫ কোটি অফার করেছেন পরামর্শ দানের বিনিময়ে আর তিনি তা গ্রহণ করেছেন। আমার সঙ্গে কারও ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক নয়। তার থেকেও বেশি সম্পর্ক আমার কাছে বেশি মূল্যবান।' পিকের সংযোজন, 'মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত ভাবে রাজনীতির কথা বলতে চাই। আমার অ্য়াকাউন্টে টাকা চাই না।'