এই সময়: এর আগে নির্বাচন কমিশন ছিল তাঁর কাছে ‘মেসো’। এ বার কি রাজ্যপালকে ‘চাচা’ পাতালেন তিনি? বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের মুখনিসৃত বাণী পর্যালোচনা করলে সম্পর্কটা তেমনই দাঁড়াচ্ছে! সোমবার রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সদলবলে রাজভবনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে।রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রতিক বেশকিছু ঘটনা এবং সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্না দিতে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে হেনস্থা করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বোসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেকরা। মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন দিলীপ।
আর সেখানেই তিনি রাজ্যপালকে ‘চাচা’ বলে ডেকে ফেলেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, ‘কী এমন পরিস্থিতি হয়ে গেল! প্যাঁচে পড়লে কাকা বাঁচাও, মেসো বাঁচাও!’ এর পরই তিনি বলেন, ‘ওয়াক্ত পড়ে বাঁকা, তো গাধা কো কহে চাচা! গোলমালের সময়ে গাধাকেও চাচা বলে ডাকার ভুল হয়ে যায়।’
দিলীপের এই বক্তব্যের পাল্টা তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘উনি খবরে ভেসে থাকার জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু বলে চলেছেন। দিলীপবাবু জানেন, তাঁর জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। তার আগে যতদিন বাজার গরম করে রাখা যায়!’ তাঁর সংযোজন, ‘দিলীপ ঘোষের তো নিজের দলেই কোনও গুরুত্ব নেই। তাই ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব সাধারণ মানুষের কাছে নেই। এখন রাজ্যপাল ওঁর কথাকে কীভাবে নেবেন, সেটা ওঁর ব্যাপার।’
রাজ্যপাল বোস অবশ্য এদিন এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করেননি। আলটপকা মন্তব্য করার জন্য দিলীপ বরাবরই বঙ্গ রাজনীতিতে পরিচিত। এবার লোকসভা ভোটের সময়েও তিনি স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করার রীতি জারি রেখেছেন। তা করতে গিয়ে যেমন নিজে বিতর্ক তৈরি করেছেন, তেমনই বিপাকে ফেলেছেন তাঁর দলকে।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পিতৃপরিচয়’-এর প্রসঙ্গ তোলায় দিলীপকে নির্বাচন কমিশন শুধু শো-কজ়ই করেনি, তাঁর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না-পেরে সেন্সিওরও করেছে। আবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার নির্দেশে বিজেপি নেতৃত্বও তাঁকে শো-কজ় করেছিল।
বঙ্গ-বিজেপির এক প্রবীণ নেতার ব্যাখ্যা, ‘দিলীপ ঘোষের আসন বদল হয়েছে এবার। নতুন জায়গায় গিয়ে ওঁকে এমন একটা কিছু করতেই হবে, যাতে সবার নজরে থাকেন। কোনও সন্দেহ নেই দিলীপদা সেই কাজটা সুচারুভাবেই করছেন। জিতে গেলে ওঁকে যে দল কুকথা বলার জন্য শো-কজ় করেছিল, সে সব কেউ মনে রাখবে না।’