প্রদীপ চক্রবর্তী, সিঙ্গুর : ২০১৬ বিধানসভা ভোটে ভালো ফল করা সত্ত্বেও ২০১৯ লোকসভা ভোটে হুগলি কেন্দ্রে দলের প্রার্থী রত্না দে নাগ হেরে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। সেই সময় তৃণমূলের অন্দরেই উঠেছিল অন্তর্ঘাতের প্রসঙ্গ। আসন্ন লোকসভা ভোটে দলের গোষ্ঠীকোন্দল চাপা দিতে হুগলিতে প্রার্থী করা হয়েছে অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচারে ঝড় তুলেছেন রচনা। কিন্তু দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটেনি। সেই পরিস্থিতিতে ভোটের বেশ কিছুদিন আগেই দলের সব অংশকে মান অভিমান ভুলে একজোট হয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দিতে মঙ্গলবার সিঙ্গুরে কর্মিসভা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার সিঙ্গুর ঘনশ্যামপুর মোড়ের একটি লজে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ এসে পৌঁছন অভিষেক। সেখানে হাজির ছিলেন হুগলি কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্ব। দু’দফায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন অভিষেক। বৈঠক সূত্রে খবর, পাণ্ডুয়া, বাঁশবেড়িয়া, সপ্তগ্রাম ও বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ও নেতৃত্বকে স্পষ্ট ভাষায় অভিষেক জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে সমস্ত কেন্দ্র থেকেই রচনাকে লিড দিতে হবে।
ভোটের সময় নেতাদের মধ্যে যে কোনও রকম কোন্দল বরদাস্ত করা হবে না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘আপনারা পঞ্চায়েত জিতবেন, পুরসভা জিতবেন, বিধানসভা জিতবেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী হেরে যাবে, সেটা কিন্তু মেনে নেওয়া হবে না।’
এ দিনের বৈঠকে রচনাকে পাশে বসিয়ে চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না, ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র, সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত, বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, পাণ্ডুয়ার বিধায়ক রত্না দে নাগ ও শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইকে নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক।
বলাগড় ও পাণ্ডুয়া নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ ও মতপার্থক্য রয়েছে। সে ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রকে পাণ্ডুয়া ও বলাগড়ের দায়িত্ব জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইয়ের উপর দেন তিনি। বিধায়কদের দলের ব্লক ও বুথ স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলার বার্তা দিয়ে অভিষেক জানিয়ে দেন, কোথাও কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেগুলি মিটিয়ে নিয়ে জোট বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ভোট করতে হবে।
বিধায়কদের তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘নিজেদের এলাকায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন। সরকারের জনমুখী প্রকল্পের কথা মনে করিয়ে দিন। মানুষকে বোঝান, বিজেপিকে জেতালে সমস্ত উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’ পাণ্ডুয়ার এক যুব নেতাকে অভিষেক বলেন, ‘আপনারা এক হয়ে কাজ করে রচনাকে জিতিয়ে আনুন। ভোটের পর আমি আপনাদের নিয়ে বসব। আমাদের ইগোর লড়াইয়ে যেন অন্য কেউ সুবিধা না পায়, সেটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
নেতাদের বেফাঁস মন্তব্য না করার জন্যও সতর্ক করেন অভিষেক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক দাবি করেন, জেলার মধ্যে হুগলি লোকসভা সবথেকে বেশি ভোটে জিতবে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম না করে তিনি বলেন, ‘উনি প্রাক্তন সাংসদ এর প্যাড ছাপিয়ে রাখুন। ভোটের ফল বেরোনোর পর উনি প্রাক্তন হবেন।’