বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন মামলায় বাবা রামদেবের নিঃশর্ত ক্ষমা গ্রহণ করল না সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণে কড়া ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, 'লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে কারণ ওদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।' বিচারপতি হিমা কোহলি বলেন, 'এই ধরণের লিখিত ক্ষমা আমরা গ্রহণ করছি না। ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা করা হয়েছে রামদেবের পতঞ্জলী সংস্থার তরফে।' ফলে রামদেব যে বড়সড় ধাক্কা খেলেন, তা বলাই বাহুল্য।এদিকে, পতঞ্জলি মামলায় অ্যালোপ্যাথি ওষুধের কার্যকরিতা হ্রস বা প্রস্ তোলার জন্য পতঞ্জলির সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা দাখিল করেছে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক। হলফনামায় কেন্দ্র সাফ জানিয়েছে যে, অ্যালোপ্যাথি না আয়ুষ পদ্ধতি কোনটি নেবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে একজন ব্যক্তির পছন্দের ওপর।
পতঞ্জলি মামলায় গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকারকে কড়া ভর্ৎসনা করে। শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, ‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন সরকার তাদের চোখ বন্ধ করে রেখেছে।’ এবার কেন্দ্র তাদের জবাবে জানিয়েছে, রাজ্যগুলিরও ক্ষমতা রয়েছে কোনও ওষুধের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার। একই সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, আইন মেনেই সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পতঞ্জলি কোভিডের পর যে করোনিল নামক ওষুধটি তৈরি করেছিল, সেই সম্পর্কে ওই সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ওষুধটি আয়ুষ মন্ত্রক যাচাই না করা পর্যন্ত তারা যেন সেটির বিজ্ঞাপন না দেয়। পরে একটি আন্তর্বিভাগীয় তদন্ত শেষে সাউ জানিয়ে দেওয়া হয় যে করোনিল শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এরই সহায়ক ওষুধ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। একই সঙ্গে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কোভিড চিকিৎসার জন্য আয়ুষ সম্পর্কিত দাবির বিজ্ঞাপনগুলি বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। হলফনামায় কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়েছে, কোনও ব্যক্ত আয়ুর্বেদিক না অ্যালোপ্যথি কীধরনের চিকিৎসা নেবেন সেটা একান্তই তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। সরকার শুধু চায় দুই ধরের চিকিৎসা পরিষেবার সমন্বয়ে সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা হোক।
বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়েছে পতঞ্জলি।গত নভেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ভুয়ো তথ্য দেওয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়তে হবে। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন যোগগুরু রামদেব। পরে বিস্তারিত হলফনামা দিয়ে জানান, এই ভুলের আর পুনরাবৃত্তি হবে না। তবে যোগগুরু একা নন, পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণও শীর্ষ আদালতে হলফনামা দাখিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি আছে।
উত্তরাখণ্ড সরকার যেখানে পতঞ্জলি যোগপীঠ ভিত্তিক একটি হলফানাম দাখিল করেছে সুপ্রিম কোর্টে। হলফনামায় বলা হয়েছে যে রাজ্য সরকারের তরফে পতঞ্জলকে একাধিকবার নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এটি বম্বে হাইকোর্টের ২০১৯ সলের অন্তর্বর্তী আদেশের অধীনে আশ্রয় চায়। পদক্ষেপ নেওয়ার আস্বাস দিয়ে উত্তরাখণ্ড সরকার বলেছে যে তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। ফলে রাজ্যের তরফে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।