• ড্রেজিং করে মজা দামোদরকে বাঁচাতে চান দিলীপ
    এই সময় | ১০ এপ্রিল ২০২৪
  • সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর : আন্দামানে প্রচার সেরে নিজের কেন্দ্রে ফিরেছেন দিলীপ ঘোষ। দ্বীপপুঞ্জে সফর সেরে তাঁর চোখ ক্ষয়িষ্ণু দামোদরের দিকে। জানাচ্ছেন, পলি জমে দামোদর এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। জিতলে স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটিয়ে দামোদরকে পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আনবেন তিনি।শিল্পাঞ্চলের লাইফলাইন দামোদরের খবর রাখেননি বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। গত পাঁচ বছরে হিল্লি দিল্লি বহু করেছেন কিন্তু, বাড়ির পাশে দামোদরের করুণ চেহারা তাঁর নজরে পড়েনি। নজরে এলে দুর্গাপুর তো বটেই দামোদর সংলগ্ন এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিটাই বদলে যেত বলে মনে করেন পরিবেশ সচেতন মানুষ।

    কেন্দ্র থেকে অর্থ বরাদ্দ করতে পারলে ড্রেজিং করে দামোদরের জলধারণ ক্ষমতা অনেক বাড়ানো যেত। পরিকল্পনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে তুললে দক্ষিণবঙ্গে দামোদর অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারত। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু কিছুই হয়নি। ভোট এলে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা গরম ভাত থেকে শিল্পায়নের স্বপ্ন ফেরি করেন।

    কিন্তু দুর্গাপুর, আসানসোলের লাইফলাইন দামোদর নিয়ে কেউ একটা রা কাড়েন না। দামোদর জলশূন্য হয়ে গেলে যে শিল্পশহরের গলা শুকিয়ে যাবে তা দু’বার ব্যারাজের লকগেট বিপর্যয়ে প্রমাণিত। ১৯৫৫ সালে দুর্গাপুরে দামোদরের উপর ব্যারাজ তৈরির পর থেকে এখনও পর্যন্ত নদীর সংস্কার হয়নি। পলি জমে নাব্যতা কমেছে। পাল্লা দিয়ে কমেছে জলধারণ ক্ষমতা। ততধিক পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলে চাহিদা। দামোদর নিয়ে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

    পরিবেশবিদ সুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষায় একটু বেশি জল ছাড়লেই ব্যারাজ থেকে রণডিহার মধ্যে মানচরগুলো ও শিলামপুর গ্রাম ভেসে যায়। অন্ডাল থেকে ব্যারাজ পর্যন্ত দামোদরের বিভিন্ন জায়গায় চর গজিয়ে গিয়েছে।প্রায় ৮-৫ কিমি চওড়া দামোদরে এখন মাত্র ২ কিমি জুড়ে জল। বাকি জায়গায় চর ও আগাছা। ড্রেজিং না করলে আগামী দিনে বেঙ্গালুরুর মতো দুর্গাপুরেও জলসঙ্কট দেখা দেবে।’

    দামোদরের পাড়ে প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা সেচ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমর রায় ব্যারাজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিলেন। বলেন, ‘ব্যারাজ তৈরির সময়ে প্রায় আড়াই লাখ কিউসেক জলধারণ ক্ষমতা ছিল। এখন এক লাখ কিউসেক জল হলেই ব্যারাজের গেট উপচে যায়। গভীরতা কতটা কমে গিয়েছে বুঝতেই পারছেন।’

    দামোদরে ড্রেজিংয়ের জন্য সংসদের জলসম্পদ দপ্তরের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা একাধিকবার ব্যারাজ পরিদর্শন করেছেন। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী থাকাকালীন উমা ভারতী ব্যারাজে এসে নমামী গঙ্গে প্রকল্পের মতো দামোদর অ্যাকশন প্ল্যানের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু দামোদরের কোনও উন্নতি হয়নি। গ্রীষ্মে ফিডার ক্যানেলে পর্যাপ্ত জল থাকে না।

    ফলে শহরে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। পুরসভার জল দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দীপঙ্কর লাহা বলেন, ‘দামোদর থেকে ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে পাম্প হাউস পর্যন্ত জল আসে। তার গভীরতা কমে গিয়েছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময়ে মেশিনে ক্যানাল থেকে পলি তোলা হয়, নইলে জলই আসবে না।’

    ডিভিসির অধীন দুর্গাপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (ডিটিপিএস) ৮৫০ মেগাওয়াটের নতুন ইউনিট তৈরি করছে। সম্প্রসারিত হচ্ছে ডিএসপি-ও। ফলে আরও চাহিদা বাড়বে জলের। সেচ দপ্তরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মজুমদার বলেন, ‘জলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। অথচ দামোদরের জলধারণ ক্ষমতা কমছে। ড্রেজিংয়ের জন্য ওয়েস্টবেঙ্গল মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ট্রেডিং সংস্থাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

    বেহাল দামোদর কি কোনও ভোটপ্রার্থীর নজর আসবে? ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়া দামোদর নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল বলে দাবি করেছেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার সকালে চায়ে পে চর্চায় ‘এই সময়’কে তিনি বলেন, ‘পলি জমে দামোদর এখন নদী নয়, পুকুরে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে ড্রেজিং করা দরকার। আন্দামানে দেখেছি, বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখা হয়। সেই জল নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানেও সেই কাজ ভালো ভাবে করতে হবে।’

    গত পাঁচ বছরে তো এই কেন্দ্রের সাংসদ কিছুই করেননি। জবাবে দিলীপ বলেন, ‘উনি কিছু কাজ করেছেন, বাকি কাজ করতে পারেননি। আমি এই কেন্দ্র থেকে জিতে দামোদর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করব।’ দামোদরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়টিও মাথায় রয়েছে তাঁর। বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে মেদিনীপুর, খড়্গপুরে কী উন্নয়ন হয়েছে তা নিশ্চয়ই জানেন। পর্যটন মানচিত্রে অবশ্যই দামোদরের স্থান হবে। শুধু ভরসা রাখুন। আমি কাজ করতে এসেছি।’
  • Link to this news (এই সময়)