অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নয়, ভূপতিনগরকাণ্ডে এনআইএ-কে রক্ষাকবচ হাইকোর্টের!
২৪ ঘন্টা | ১০ এপ্রিল ২০২৪
অর্ণবাংশু নিয়োগী: ভূপতিনগরকাণ্ডে আপাতত স্বস্তি এনআই-এ অফিসারদের। ভূপতিনগরের ঘটনায় এনআইএ-কে রক্ষাকবচ। রক্ষাকবচ কলকাতা হাইকোর্টের। এই রক্ষাকবচের ফলেই এনআইএ অফিসারদের আপাতত স্বস্তি। আদালতের নির্দেশ, এনআইএ অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নয়। নিম্ন আদালতে পুলিস রিপোর্ট দেবে না। কিন্তু তদন্ত চালিয়ে যাবে। তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হবে পুলিসকে। পাশাপাশি ভূপতিনগরের ২টি মামলায় কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশও। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে ভূপতিনগরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামের রাজকুমার মান্নার দোতলা বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাণ হারান ৩ জন। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই ঘটনার তদন্ত করছে NIA। শনিবার ভূপতিনগর বিস্ফোরণের কাণ্ডের তদন্তে পূর্ব মেদিনীপুরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের মতো ভূপতিনগরেও তল্লাশি চলাকালীন আক্রান্ত হন এনআইএ অফিসাররা। অভিযোগ, NIA আধিকারিকদের উপর চড়াও হন গ্রামবাসীদের একাংশ। স্রেফ ইটবৃষ্টি নয়, ভাঙচুর চলে গাড়িতেও। পালটা NIA-র বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন ধৃত তৃণমূল নেতা মনোব্রত জানার স্ত্রী। ভূপতিনগর থানায় এনআইএ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন ধৃত তৃণমূল নেতা মনোব্রত জানার পরিবার। এফআইআর দায়ের করে সেই ঘটনার তদন্তও শুরু করে পুলিস। যার প্রেক্ষিতে বিবৃতি জারি করে এনআইএ দাবি করে,"যা অভিযোগ উঠেছে, সবই মিথ্যা। NIA-র ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে।" বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, "হাইকোর্টের নির্দেশে ভূপতিনগর বিস্ফোরণের তদন্ত করছে NIA। আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। শনিবার নাড়ুয়াবিলা গ্রামে গিয়ে বিনা প্ররোচনায়, অপ্রত্যাশিতভাবে হামলার মুখে পড়েন সংস্থার আধিকারিকরা। তাঁদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ৫ জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। এরপর ধৃত মনোব্রত জানাকে যখন স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন NIA আধিকারিকদের উপর হামলা চালানো হয়। এক আধিকারিক আহত হন। হামলায় একটি সরকারি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে এনআইএ।" NIA-এর তরফে দাবি করা হয়, তল্লাশি শুরু হওয়ার আগেই NIA এক অধিকারিক থানায় পৌঁছন। ডিউটি অফিসারের কাছে পুলিস ফোর্স চান। এরপর ৫টি লোকেশনে তল্লাশি শুরু হয়। ভোর সাড়ে ৪টের আগেই থানায় পৌঁছয় NIA। তল্লাশি চালাতে প্রায় ৩০ জন CRPF নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ৬টি টিম ছিল ব্যাক আপে। একটি CRPF ফোর্সও রাখা ছিল। মোট 8টি গাড়ি ছিল এই অপারেশনের জন্য। গন্ডগোল শুরু হওয়ার পর সেই ফোর্স ডাকা হয়েছিল ঘটনাস্থলে। ভোর সোয়া ৬টা নাগাদ যখন আক্রমণ হয়, তার অনেক আগেই NIA-এর তরফে থানায় জানানো হয়েছিল যে, তারা তল্লাশি চালাতে যাচ্ছে। যদিও এনআইএ-র দাবির পালটা জেলা পুলিস সূত্রে দাবি, ভোর ৫টার পর এনআইএ-এর একটি দল থানায় আসে। লিখিতভাবে ৫ লোকেশনে তল্লাশির কথা জানায়। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন কোন লোকেশন, সেটা উল্লেখ করা হয়নি। জেলা পুলিস আরও দাবি করে, যখন তারা সহযোগী টিম দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই খবর আসে হামলার ঘটনার। জেলার পুলিসের বক্তব্য, একটি টিম থানায় ভোরবেলা এলেও, ৩টের মধ্যে গ্রামে ঢুকে যায় কয়েকটি দল। আর ভোর ৪টে নাগাদ লোকেশনে (অর্থাৎ মনোব্রত,বলাইদের বাড়িতে) পৌঁছে যায় এনআইএ টিম। এখন এফআইআর-এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় এনআইএ। ভূপতিনগরে এনআইএ আধিকারিকদের উপরে হামলা চালানোর ঘটনায় মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এনআইএ। মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তারপরই হয় শুনানি। ওদিকে গতকালই NIA-র পুলিস সুপার ধন রাম সিংকে ডেকে পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। তাঁর জায়গায় পাটনা থেকে কলকাতায় আসছেন রাকেশ রোশন।