• জঙ্গলে আগুনের ঘটনা চল্লিশ, সচেতনতায় র‍্যালি বনকর্তাদের
    এই সময় | ১০ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়, বাঁকুড়া: আগুনের হাত থেকে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে পথে নেমেছে বন দপ্তর। শুরু হয়েছে বাঁকুড়ার তিনটি ডিভিশনের জঙ্গলে বিশেষ নজরদারি। সচেতন করা হচ্ছে এলাকার মানুষদেরও। গ্রীষ্মে পাতা ঝরার মরশুমে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যার ফলে আশঙ্কা থাকে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার।গাছের ক্ষতির পাশাপাশি কীটপতঙ্গ ও বন্যপ্রাণের জীবনও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জঙ্গলে আগুন লাগানোর সেই প্রবণতা রুখতেই এবার বাড়তি তৎপর বনকর্তারা। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরশুমে ইতিমধ্যে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, রাধানগর রেঞ্জ মিলিয়ে জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে কমবেশি ৪০টি।

    প্রতি ক্ষেত্রেই তৎপরতার সঙ্গে আগুন নিভিয়েছে বন দপ্তরের টিম। ফলে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। জঙ্গলে আগুন ধরানো রুখতে এলাকায় মাইক-প্রচার চালানো হচ্ছে। গত সোমবারও বেলিয়াতোড় বন দপ্তরে আলোচনা সভার পর সাইকেল র‍্যালি করেছেন বনকর্তারা। সচেতনতার বার্তা দিতে সঙ্গে ছিল প্ল্যাকার্ড।

    বেলিয়াতোড় ফরেস্ট অফিস থেকে ছান্দার পর্যন্ত যাতায়াত মিলিয়ে প্রায় ৬ কিমি পথে ওই র‍্যালিতে সামিল হয়েছিলেন স্কুল, কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। যোগ দিয়েছিলেন এনসিসি সদস্য, পুলিশকর্মীরাও। এছাড়া ছিলেন যৌথ বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য, বনকর্মী, আধিকারিকরা।

    সাইকেল চালিয়ে র‍্যালিতে অংশ নেন মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল, বাঁকুড়া উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম ও প্রদীপ বাউড়ি। মুখ্য বনপাল বলেন, ‘জঙ্গলে আগুন লাগানো বন্ধ করা এবং বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যেই মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে আমরা তৎপর। তার জন্য প্রতিটি রেঞ্জেই বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’

    জঙ্গলের পাশাপাশি শুশুনিয়া পাহাড়কেও আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে তৎপর বন দপ্তর। উত্তরের পাশাপাশি বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগেও রানিবাঁধ, ঝিলিমিলি, সুতান, পিড়রগাড়ি, সিমলাপালে বিস্তীর্ণ জঙ্গল রয়েছে। সেখানেও কয়েক জায়গায় সম্প্রতি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তা নেভানোয় অবশ্য ক্ষয়ক্ষতি কিছু হয়নি বলে দাবি বন দপ্তরের।

    সচেতনতার বার্তা দিতে দিন কয়েক আগে রানিবাঁধেও স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষকদের নিয়ে সাইকেল র‍্যালি করেন বনকর্তারা। জেলার পাঞ্চেত বন বিভাগ জুড়েও রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর বনভূমি। ঘন জঙ্গলে খরগোশ, বনবিড়াল, বনশুয়োর, শেয়াল, হুড়াল, গো-সাপ থেকে শুরু করে নানা বন্যপ্রাণীর ঘোরাফেরা রয়েছে। জয়পুরের জঙ্গলে রয়েছে কয়েকশো চিতল হরিণ।

    এই বন বিভাগের বাঁকাদহ, জয়পুর, বিষ্ণুপুর রেঞ্জ আবার হাতিদের যাতায়াতের করিডর। সব দিক মাথায় রেখে এখানেও জঙ্গলে আগুন ঠেকাতে তৎপর বন দপ্তর। সম্প্রতি দু’একটি ঘটনা নজরে এলেও ক্ষয়ক্ষতি কিছু হয়নি বলে তাদের দাবি। এখানেও জানুয়ারি মাসে হয়েছিল প্রায় ২৮ কিমি সাইকেল র‍্যালি। ডিএফও রাজু সরকার জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’

    দিনকয়েক আগে সোনামুখী ব্লকের খাগ জুনিয়র হাইস্কুল লাগোয়া জঙ্গলে ঝরা পাতায় আগুন লাগে। মুহূর্তে সেখানে ছুটে আসে স্কুল পড়ুয়ারা। ঘটনাস্থলে চলে আসেন শিক্ষকরাও। পড়ুয়া, শিক্ষক সকলে মিলে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
  • Link to this news (এই সময়)