• UPSC-র ইন্টারভিউ ফেলে ভোটের রেসে!
    এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: ধরে নিন, বাড়ি থেকে পাক্কা ১২০০ কিলোমিটার দূরে আপনি গিয়েছেন চাকরির পরীক্ষা দিতে। তা-ও আবার যে সে চাকরি নয়, খাস কেন্দ্রীয় সরকারি আমলার চাকরি! ইউপিএসসি-র ইন্টারভিউ বোর্ড রেডি। এই ডাক এল বলে আপনার! কিন্তু ঠিক শেষ মুহূর্তে অদ্ভুত একটা অফার উড়ে এল ধাঁ করে— ‘আমলার চাকরি না-করে আপনি বরং ভোটে দাঁড়িয়ে যান।’ কী করবেন? চিন্তায় পড়ে গেলেন তো! স্বাভাবিক।এক দিকে কালেক্টর হওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, আর তার উল্টোদিকে হঠাৎ আসা ভোটে দাঁড়ানোর অফার। বিহারের দ্বারভাঙা থেকে দিল্লিতে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া সেই যুবক কিন্তু সে দিন মিনিটখানেক ভেবেই ডিসিশন নিয়ে নেন। দিন তিনেক পর যুদ্ধজয়ের হাসি সঙ্গে নিয়ে ফিরেও আসেন বিহারে। না, সে দিন তাঁর হাতে ইউপিএসসি-র জয়েনিং লেটার ছিল না। ফিরেছিলেন কংগ্রেসের দেওয়া ভোটের টিকিট নিয়ে। হাতের মুঠো থেকে ফস্কে যাওয়া আমলার চাকরি।

    রাজনীতিতেও নেহাতই আনকোরা— বংশের কেউ কোনও দিন ভোটে দাঁড়াননি। সেই রামভগৎ পাসওয়ানই কিন্তু দু’বার লোকসভা এবং একবার রাজ্যসভা সাংসদও হয়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে! সময়টা সাদা-কালো— ১৯৭০। মনে একরাশ রঙিন স্বপ্ন নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন রামভগৎ। ফিরেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য স্বপ্ন নিয়ে। একাত্তরের লোকসভা ভোট। কংগ্রেস বলেছে, রোসেরা লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে।

    শোনা যায়, ইউপিএসসি-র দোরে দাঁড়িয়ে থাকা রামভগতকে সে বার ভোটে নামার ব্যাপারে কনভিন্স করেছিলেন ডাকসাইটে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্র, বিনোদানন্দ ঝা এবং নগেন্দ্র ঝা। বলাই বাহুল্য, একজন হবু আমলাকে ভোটের প্রার্থী হতে রাজি করাটা মোটেই চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না! চোদ্দ পুরুষের কেউ কোনও দিন সক্রিয় রাজনীতি করেননি। রামভগৎ তবু আমলার চাকরি প্রায় স্বেচ্ছায় ছেড়ে জোরকদমে নেমে পড়েছিলেন ভোটের রেসে। প্রচারে সম্বল একটা শুধু সাইকেল। আর ওই কংগ্রেসের দেওয়া টিকিট।

    নদী পেরিয়ে প্রচার করতে গেলেও সাইকেলটা নৌকায় তুলে নিতেন রামভগৎ। তাঁর প্রাণপণ পরিশ্রম অবশ্য মাঠে মারা যায়নি। প্রথমবারেই বাজিমাত করেন আদতে মধুবনের ছেলে। সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থী রামসেবক হাজারিকে কার্যত গোহারা হারিয়ে সটান নয়াদিল্লির লোকসভায় পৌঁছে যান রামভগৎ। তারপর ইমার্জেন্সি পিরিয়ড পার করে ১৯৭৭-এর লোকসভা ভোট। সে বার রামসেবকের কাছেই হারেন রামভগৎ। কংগ্রেস অবশ্য সসম্মানে তাঁকে নিয়ে যায় রাজ্যসভার সাংসদ করে।

    চুরাশিতে কিন্তু ফের পাশাবদল!

    আবার লোকসভা ভোটে জেতেন রামভগৎ। সে বারই প্রথম তাঁকে ফোর-হুইলারে প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল। ১৯৮৯ এবং ১৯৯৬-এর ভোটেও একই কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে আর জেতা হয়নি রামভগতের। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১০-এ মারা যান তিনি। না, রামভগতের পরিবারের আর কেউ এখনও পর্যন্ত রাজনীতিতে নাম লেখাননি। রামভগতের পাঁচ ছেলে-মেয়েরই এক কথা— ‘রাজনীতি ব্যাপারটাই তো পুরো পাল্টে গিয়েছে। কখনও ভোটের মাঠে নামার কথা মনেই হয়নি।’
  • Link to this news (এই সময়)