Fact Check : ছাপ্পা পড়লেও বুথে ভোট দিতে পারবেন? কমিশনের নামে ছড়ানো টেন্ডার ভোটের সত্যতা জানুন
এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৪
লোকসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, 'ভোটারদের অধিকার' নিয়ে বেশ কিছু সতর্কবার্তা রয়েছে। তার মধ্যে 'চ্যালেঞ্জ ভোট', 'টেন্ডার ভোট' বিষয়গুলি নিয়ে ভোটারদের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
কী দাবি করা হয়েছে?ভাইরাল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে দাবি করা হয়েছে, ভোটের দিন বুথে গিয়ে যদি দেখা যায় ভোটার লিস্টে আপনার নাম নেই সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে 'চ্যালেঞ্জ ভোট' দাবি করবেন। এটি ৪৯পি আইনের ধারার আওতায় আপনাকে ভোট দেওয়ার অধিকার দেবে।
অথবা কেউ যদি আপনাকে জানায়, আপনার ভোট আগেই পড়ে গিয়েছে, সে ক্ষেত্রে 'টেন্ডার ভোট'-এর আওতায় চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।
যদি কোনও নির্দিষ্ট বুথে ১৪ শতাংশের বেশি টেন্ডার ভোট চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে সেই বুথে পুনর্নির্বাচন হবে।
এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভাইরাল হওয়া মেসেজটিতে একটি হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। +91-9999499044 এটিতে ফোন করলে 'টেন্ডার ভোট' এবং 'চ্যালেঞ্জ ভোট' সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
অনুসন্ধানএই ভাইরাল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নিয়ে তথ্য যাচাই করেছে নিউজ চেকার। গুগল কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে 'চ্যালেঞ্জ ভোট' নামে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও ভোট দেওয়া যাবে এমন কোনও বিষয় নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও বিকল্প উপায় ঘোষণা করা হয়নি।
গত ২০১৯ সালের ৯ মে ডেকান হেরাল্ড সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে 'চ্যালেঞ্জ ভোট' শব্দটি নজরে আসে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, পোলিং বুথে থাকা রাজনৈতিক এজেন্ট কোনও ভোটারের পরিচয় চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, যদি তাঁর মনে হয় ওই ভোটার ভুয়ো।
ত্রিপুরার CEO ওয়েবসাইটে 'হ্যান্ডবুক ফর প্রিসাইডিং অফিসার ২০২৩' বুকলেটে 'চ্যালেঞ্জ ভোট' শীর্ষক অংশ রয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ২ টাকা নগদ জমা করে কোনও ভোটারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন একটি নির্দিষ্ট ভোটের পোলিং এজেন্ট। তবে ভুয়ো ভোটার প্রমাণিত না হলে সেই ব্যক্তিকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিতে হবে। তবে যদি কোনওভাবে ভুয়ো ভোটার প্রমাণিত হয় তবে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন পোলিং এজেন্ট।
তবে ১৯৬১ সালের নির্বাচন কমিশনের আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধিতে কোনও 'চ্যালেঞ্জ ভোট' বিষয়ের উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ৪৯পি ধারা 'টেন্ডার ভোট' সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেয়। কারও নামে ভোট পড়ে গেলে তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বুথের প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে ওই ব্যক্তিকে ব্যালট ইউনিটের মাধ্যমে ভোট দিতে দেওয়া হবে। এছাড়াও ১৪ শতাংশ টেন্ডার ভোট থাকলে কোনও নির্দিষ্ট বুথের ক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচন হতে পারে এমনটাও উল্লেখ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিয়মে। তবে এই টেন্ডার ভোটগুলি মূল ভোটের মধ্যে গণনা করা হয় না। যদি কোনও বুথে টেন্ডার ভোটের তুলনায় আসন ভোটের সংখ্যা কম থাকে তবেই কেবলমাত্র সেগুলি গণনার অধিকার থাকবে।
সত্যিটা কী?অতএব সত্যতা যাচাই করে দেখা গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া মেসেজটি অর্ধসত্য। টেন্ডার ভোট সম্পর্কে যা লেখা রয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী সত্য। আবার চ্যালেঞ্জ ভোট বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়ো।
(This story was originally published by News Checker, and Translated and Edited by Ei Samay Digital as part of the Shakti Collective).