Eid In Gaza 2024 : পেটে খিদে আর মনে ভয় নিয়েই ঈদে নিথর গাজ়া
এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৪
গাজ়া: ত্রাণ আটকাতে মরিয়া ইজ়রায়েল। অন্য দিকে আবার দেদার এয়ারস্ট্রাইকও জারি রেখেছে তারা। বাতাসে বারুদ, আর পোড়া লাশের গন্ধ। যাকে বলে— ষাঁড়াশি চাপ। পবিত্র রমজান মাসের শেষে তাই পেটে খিদে, আর মনে আতঙ্ক নিয়েই খোলা আকাশের নীচে ঈদের নমাজ পড়ল গাজ়া। দু’পাশে ইনস্টলেশন আর্টের মতো করে সাজানো মসজিদের ধ্বংসস্তূপ। গোটাটা ফ্রেমবন্দি করে রাখল দেশ-বিদেশের মিডিয়া।গত ছ’মাসে লাগাতার ইজ়রায়েলি হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজ়া। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী পবিত্র রমজান মাসকেও রেয়াত করেনি। একই ছবি ঈদের দিনেও। সাতসকালেই অবরুদ্ধ গাজ়ার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ফের হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল আইডিএফের বিরুদ্ধে। নিহত চার শিশু-সহ অন্তত ১৪!
বিশ্বের অন্য সব প্রান্তের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যখন তাঁদের সব চেয়ে বড় উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেই ঈদের সকালে দেখা গেল মুখ শুকনো গাজ়ার শিশুদের। খিদের জ্বালা আর প্রাণের ভয় চোখেমুখে স্পষ্ট। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইউনিসেফের দাবি, গত ছ’মাসে গাজ়ায় যত মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছে, তাদের মধ্যে এক শতাংশ শিশু আক্ষরিক অর্থেই অনাথ হয়েছে।
তাদের দেখভাল করার কেউ নেই! রাফার এক শরণার্থী শিবির থেকে বছর এগারোর লায়ানকে বলতে শোনা গেল— ‘এ বারের ঈদ একেবারেই অন্য রকমের। এটা ভয়ের ঈদ। যুদ্ধ চলছে যে! আর কার সঙ্গেই বা উৎসব করব! এক দিদি ছাড়া পরিবারের আর কেউই তো বেঁচে নেই।’ গত অক্টোবরে আল আহলি হাসপাতালের শরণার্থী শিবিরে ইজ়রায়েলি হামলায় একসঙ্গে শেষ হয়ে গিয়েছিল লায়ানের পরিবারের অন্তত ৩৫ জন সদস্য!
গত বছরও ঈদের দিন দক্ষিণ রাফায় ফ্যামিলি গেট টুগেদার করেছিলেন মহম্মদ আল-হামেদে। এ বার নড়ার ক্ষমতাও নেই তাঁর। ইজ়রায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত শরীর। মন আরও। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘বাচ্চাগুলো দিকে তাকাতে পারছি না। ঈদের স্পেশাল ‘মামোল’ বিস্কুট নিয়ে গতবারও ওরা কতই না আনন্দ করেছিল। নতুন জামাকাপড়, খাওয়া-দাওয়া— এবছর কিছুই হলো না।’
বছর তিরিশের তরুণী আমানি মনসৌর ঈদের সকালে দাঁড়িয়েছিলেন যুদ্ধে নিহত শিশুপু্ত্রের ছোট্ট কবরটার ঠিক পাশে। চোখে অঝোরধারা। বললেন, ‘গতবারের ঈদেও ছেলেটা আমার সঙ্গে ছিল। সকালে মসজিদে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, আম্মি তুমি কিন্তু আমার গিফ্ট সব সাজিয়ে রেখো। সব করেছিলাম। কিন্তু এ বার? জানি না, এখনও বেঁচেই বা আছি কেন! আমার সবই তো গেছে।’
গত রবিবার দক্ষিণ গাজ়ার একাংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে ইজ়রায়েল। সেই খবর পাওয়ার পরপরই খান ইউনিস শহরে দল বেঁধে ফিরতে শুরু করেছেন প্যালেস্তিনীয়রা। কিন্তু কোথায় কী? টানা ছ’মাসের হামলায় বাড়িঘর সব মাটিতে মিশেছে। ধসে পড়া বহু ভবনের নীচ থেকে এখনও অনেকের বডি বের করা যায়নি।
এ দিন সকালে সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এক তরুণীকে হাহাকার করতে শোনা গেল— ‘আমাদের আর কোনও শহর নেই। শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। রাস্তাঘাটও সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে ওরা। সর্বত্র যেন এখনও বারুদ আর লাশের গন্ধ পাচ্ছি। এমন ঈদ দেখব কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’
গাজ়ার যা পরিস্থিতি, তাতে গোটা বিশ্বই মানবতা ও নৈতিকতা নিয়ে কথা বলার অধিকার হারিয়েছে— এ দিন মন্তব্য করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গাজ়ার এই সর্বনাশের জন্য গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার নেতানিয়াহুকে বিঁধে চলেছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ দিন ফের তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মতে গাজ়ায় লাগাতার ভুলের পর ভুল করে চলেছেন ইজ়রায়েলি পিএম।’
আগামী ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে গাজ়ায় যত সম্ভব ওষুধ ও খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার আর্জিও জানান তিনি। ইজ়রায়েল তবু হামাস-নিধনের কথা বলে যুদ্ধেই অনড়। এ দিনও শাতি রিফিউজি ক্যাম্পে ইজ়রায়েলি হামলায় হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়ের তিন ছেলে ও তিন নাতি-নাতনির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও দেদার হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর বাহিনী।
এ দিকে শত বিতর্কের মধ্যেও তাদের অস্ত্র সরবরাহে অনড় ব্রিটেন। একইরকম ভাবে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বাইডেন প্রকাশ্যে সরব হলেও তাঁর দলেরই একাধিক কংগ্রেসম্যান মার্কিন সেনেটে লাগাতার দাবি করে চলেছে যে, গাজ়ায় মাস-মার্ডার নিয়ে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তাঁদের হাতে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই।