বিদ্যুৎ সরার ৫ মাস পর অমর্ত্য ফিরলেন বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে
এই সময় | ১১ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বুধবার বক্তৃতা দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যর পৈতৃক ভিটে ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছিল তাঁর। সেই সময়ে নোবেলজয়ীকে ক্রমাগত আক্রমণ করে বিবৃতি দিতেন, তাঁর উদ্দেশে কটূক্তি করতেন বিশ্বভারতীর তদানীন্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়।অমর্ত্য সেনকে অপমানের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হন। গত বছর নভেম্বরে উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুতের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। বিদ্যুৎ সরে যাওয়ার পর রবি ঠাকুরের হাতে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগল অমর্ত্যর। ঘটনাচক্রে, যাঁর নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
বুধবার অমর্ত্যর ভিডিয়ো-বার্তা শোনার জন্য শান্তিনিকেতনে জড়ো হয়েছিলেন বহু ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীরা। যদিও এ দিনের অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও অমর্ত্যরই ছাত্র প্রভাত পট্টনায়ক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মৌখিক নির্দেশে সেই অনুষ্ঠান শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখন বিদ্যুৎ আর উপাচার্য পদে নেই। চার বছর পর আয়োজিত হলো সেই কাঙ্ক্ষিত আলোচনাসভা। যেখানে নাম না-করে প্রাক্তন উপাচার্যকে কটাক্ষও করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। এ দিন বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগে স্কলার-অধ্যাপক অশোক রুদ্র মেমোরিয়াল লেকচারের আয়োজন করা হয়েছিল। দর্শকদের সঙ্গে প্রভাত পট্টনায়ককে ইন্ট্রোডিউস করান অমর্ত্য।
কেমব্রিজ থেকেই অমর্ত্য ভিডিয়ো-বার্তা দেন। অনলাইনে তাঁর যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে ভারতীয় সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে তিনি ভিডিয়ো-বার্তা পাঠিয়েছেন। শান্তিনিকেতনের মাহাত্ম্যের কথা এ দিন তুলে ধরেন নোবেলজয়ী। একই সঙ্গে নাম না-করে বিদ্যুৎকে খোঁচাও দেন অমর্ত্য।
তাঁর কথায়, ‘শান্তিনিকেতন একটা অসাধারণ টাউন। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর (প্রাক্তন) এবং তাঁর কিছু লোক এটাকে স্বীকৃতি দিতে চান না। তবে আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের সংযোগ একটা বড় সুযোগ।’ অমর্ত্য বলেন, ‘এখানে অনেক ধরনের ভাষার মানুষ এক সঙ্গে থাকেন। বাংলাতেও আমরা কথা বলি, ইংরেজিতেও কথা বলতে পারি। হিন্দি ইত্যাদিও চলতে পারে।’ বক্তৃতার একেবারে শেষে নোবেলজয়ী বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য, আমি শান্তিনিকেতনে জন্মেছি।’
এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রভাত পট্টনায়ক তাঁর বক্তৃতায় দেশের শ্রমিক-কৃষকের অপ্রাপ্তি, বেকারত্ব, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যাপক আর্থিক ফারাকের কথা তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কনফারেন্স হল-এ এই অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্বভারতীর অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তাঁকেও দীর্ঘদিন সাসপেন্ড করে রেখেছিলেন প্রাক্তন ভিসি।
সুদীপ্ত বলেন, ‘আমি বর্তমান উপাচার্য সঞ্জয় মল্লিকের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তিনি এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছেন। এর আগে ২০২০ সালেই এই বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ভিসি-র অফিস থেকে ফোন করে মৌখিক ভাবে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। সে সব দিনের কথা আমরা যেন ভুলে না-যাই।’