প্রদীপ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া : ব্যস্ত নায়িকা, জনপ্রিয় সঞ্চালক, সফল ব্যবসায়ীর পরিচয় ছেড়ে আপাতত তাঁর পরিচয় হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন পরিচয়টা সবচেয়ে তাঁর সবচেয়ে কারছে। উত্তরটা সহজ। মা। একমাত্র ছেলেকে সিঙ্গল পেরেন্ট হিসেবে বড় করে তুলছেন রচনা। ফিল্ম ও টেলিভিশনের কেরিয়ারের মাঝপথে যখন রাজনীতির মঞ্চে আসার হাতছানি আসে, তখনও সে পথে হাঁটার ক্ষেত্রে দ্বিধার কারণ ছিল সন্তান।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলে অনেকটা বড় হয়ে যাওয়ার পর আর তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাক ফেরাতে পারেননি রচনা। বুধবার চুঁচুড়ায় অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় এমন অনেক অজানা তথ্যের খোঁজ দিলেন হুগলির তারকা প্রার্থী। এ দিন চুঁচুড়ায় একটি সভাকক্ষে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে চা চক্রের আড্ডায় খোলামেলা মেজাজে ধরা দিয়েছিলেন রচনা।
প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয়। আমি তাঁকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সিনেমায় কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। সংসারও সামলেছি। এখন জীবনের এই পর্বে এসে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
কী ভাবে প্রার্থী হলেন তিনি?
রচনার কথায়, ‘লোকসভা ভোটের অনেক আগে আমাকে দিদি রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। আমার নিজের একটা ছোট ব্যবসা আছে। আমার ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। তাই ছেলেকে নিয়ে আমি খুবই ব্যস্ত থাকি।’ ছেলেকে নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন রচনা।
তিনি বলেন, ‘দিদি বলেন, ও তো বড় হয়ে গিয়েছে। এর পর ও আরও পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে। তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা কোরোনা। এর পরেই আমি দিদির প্রস্তাব মেনে নিই।’ ১৩ বছর ধরে টিভিতে জনপ্রিয় একটি টক শো সঞ্চালনা করেন রচনা। কাজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তিনটি করে পর্ব শুটিং করা হয়। প্রতিদিন ১২ জন মহিলার সঙ্গে কথা বলা, তাদের জীবনকে দেখা ও বোঝার সুযোগ পাই। আমার আর নতুন করে কিছু পাওয়ার ও চাওয়ার নেই।’
ঠিক ৩০ বছর আগে, ১৯৯৪ সালে ফিল্মে পা দেওয়া রচনা বিনোদনের জগতে ‘ভেটারেন’। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে যে তিনি একেবারেই নতুন, সেটা নিজেই জানিয়ে দিলেন হাসিমুখে। প্রচার শুরুর পর থেকেই তাঁকে নিয়ে মিমের ছড়াছড়ি। সে কথা উঠতেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘রাজনীতিতে যখন এসেছি তখন ভালো মন্দ সব কিছু আমাকে শুনতে হবে। তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি। যারা মিম তৈরি করেন আমি তাঁদের শিল্প নৈপুণ্যকে সম্মান করি। একটা মিম দেখেছি বাংলা ত্যাগ সিনেমার অংশ। সেখানে আমাকে ও লকেটকে দেখানো হয়েছে। এগুলোতে আমি মজা পাই।’
প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে রচনা বলেন, ‘একটা সময় আমরা চুটিয়ে কাজ করেছি। অনেক আড্ডা দিয়েছি। লকেট গান করেছে, প্রসেনজিৎ হারমোনিয়াম বাজিয়েছে। ওর সঙ্গে পুরোনো ভালো স্মৃতি গুলি নিয়েই থাকতে চাই। তবে রাজনৈতিক ভাবে হুগলি কেন্দ্রের মানুষের কোনও উন্নয়ন তিনি করেননি।’ এ দিন সেখানে হাজির ছিলেন,বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত, অসিত মজুমদার, অসীমা পাত্র ও অরিন্দম গুঁই।